প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহুআনহু এর বংশধরগণ যেভাবে ফুরফুরায় এলেন
আরবের বুকে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডাকে সাড়া দিয়ে সমাজের গণ্যমান্য কেউ যখন আল্লাহর সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণে এগিয়ে আসেনি, তখন উচ্চ বংশীয় এবং সর্বত্র সম্মানিত সায়্যিদিনা হযরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে বিজয়ের সূচনা করলেন। সেই থেকে ইসলামের জন্য তাঁর খেদমত ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। তিনি ইসলামের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী, নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শ্বশুর ও হিজরতের সাথী, ইসলামের প্রথম খলিফা। নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ইমামতিতে নামাজ পড়েছেন। নবীজীর আহ্বানে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছেন। নবীজী তাঁকে সিদ্দিক উপাধীতে ভূষিত করেন। তামাম উম্মতের নেক আমল যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর আমলনামা যদি অন্য পাল্লায় রাখা হয় তবে সম্ভবত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর আমলনামাই ভারী হয়ে যাবে।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিভিন্ন জিহাদে শরীক হয়েছেন, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। যাকাত অস্বীকারকারী ও ভ- নবীর বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। জিহাদ, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে দূর-দূরান্তে বিভিন্ন দেশে বাহিনী পাঠিয়েছেন, অভিযান চালিয়েছেন। সিদ্দিকে আকবর (রা.)-এর এই কাজের ধারা অনুসরণ করে তাঁর বংশধরেরা ইসলামের স্বার্থে হিজরত করে আরব ছেড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং সকল বাতেল পথ ও মতের বিরুদ্ধে যুগে যুগে জিহাদ করেছেন।
হিজরতের এই ধারাবাহিকতায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ২৩তম নিম্ন পুরুষ হযরত খাজা মুহাম্মদ রুস্তম (রহ.) তৎকালীন মধ্য এশিয়ার খোরাসানে বসবাস করছিলেন। চেঙ্গিস খানের দৌরাত্ম্যের সময় তিনি হিযরত করে ভারতে চলে আসেন। তিনি চারবাগ-জালালাবাদে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
আকবর নামায় আছে আকবর শাহ্ খাজা রুস্তম খোরাসানীর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার মহলন্দ মৌজায় এসেছিলেন, এতে বুঝা যায় তার ‘কবর’ মুর্শিদাবাদে আছে। কিন্তু পূর্বোক্ত কথাই বিশ্বাসযোগ্য। কেননা তাঁর মাজার শরীফের পুনঃ সংস্কার ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে ওয়াকফ সম্পত্তি পূর্বতন বাদশাহগণের সময় হতে অদ্যাবধি বিদ্যমান আছে।
হযরত রুস্তম খোরাসানী (রহ.)-এর পুত্র হযরত মাওলানা জিয়াউদ্দীন জাহেদ সিদ্দিকী (রহ.)। তিনি ইশায়াতে ইসলামের জন্য এলাহাবাদ জেলার ক্রীড়া-মাণিকপুরে কিছুকাল অবস্থান করেন। তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর ওলি-আল্লাহ ছিলেন। তারিখে-মসিরে কুৎবীতে উল্লিখিত আছে হযরত মখদুম জিয়াউদ্দীন জাহেদ, হযরত শাহ কড়ক, কাজী রুকনউদ্দীন ও সুলতানুল মাশায়েখ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া দেহলবী (রহ.) একই সময়ের লোক ছিলেন।
হযরত জিয়াউদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.)-এর দ্বিতীয় পুত্র হযরত মাওলানা মনসুর বাগদাদী (রহ.)। তিনি বাগদাদে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছিলেন বলে বাগদাদী নামে খ্যাত। তিনি কোন সময় বঙ্গে আগমন করেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না। জীবনী ইতিহাসে তাঁর বংশধরদের পীর-মুরিদী ও ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় আগমনের কথা জানা যায়।
কয়েকটি জীবনী পুস্তকে জানা যায় যে, তিনি সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন ১২৬৬-৮৭ খৃস্টাব্দে ৬৬৪-৬৮৫ হিজরী)-এর সময় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হুগলী জেলার কৃষ্ণনগর মোল্লাপাড়া গ্রামে আগমন করেন।
হযরত সৈয়দ হোসেন বুখারী (রহ.), হযরত শফিউদ্দীন ওরফে শাহ সুফি সুলতান শহীদ (রহ.), হযরত মাওলানা মনসুর বাগদাদী (রহ.) প্রমুখ বুজুর্গের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। হযরত শাহ সুফি সুলতান শহীদ (রহ.) হুগলী জেলার পান্ডূয়া (ছোট) বসবাস করতেন এবং মাওলানা মনসুর বাগদাদী (রহ.)ও একই জেলার মোল্লাপাড়ায় বসবাস করতেন। স্বাভাবিক কারণে উভয়ে সম্মিলিত হয়ে ফুরফুরা ও পান্ডূয়া বিজয়ের সামিল হয়েছিলেন।
পূর্বসূরীদের অনুকরণে হযরত মনসুর বাগদাদী সিদ্দিকী (রহ.) সতীর্থ মুজাহিদদের সাথে নিয়ে সৈয়দ হোসেন বুখারী (রহ.)-এর সেনাপতিত্বে অমুসলিম রাজার বিরুদ্ধে জিহাদ করে ফুরফুরায় ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডীন করেছিলেন। এরপর তিনি এ অঞ্চলেই স্থায়ীভাবে থেকে যান ও ইশাআতে ইসলামের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়। তাঁর কবর হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়া থানার অন্তর্গত কৃষ্ণনগর মোল্লাপাড়ার কুলেকাশ-কন্দকপুরে বিদ্যমান। তাঁর সঠিক মৃত্যুসন জানা যায় না।
পথ নির্দেশ: হাওড়া-কলকাতা-উদয়নারায়ণপুর, ভায়া ইছানগরী জগৎবল্লমপুর পথে খুড়িগাছী মোড়ে নেমে কুলেকাশ মৌজায় বিভূতিভূষণ শেঠের পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব পাড় নিমগাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় তাঁর কবর।
হযরত মনসুর বাগদাদী (রহ.)-এর পর থেকে তাঁর বংশধরেরা যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে বসবাস করে ইশা’আতে ইসলামের কাজ করে যাচ্ছেন।
হযরত মনসুর বাগদাদী (রহ.)-এর ৯ম অধঃস্তন পুরুষ হলেন হযরত মোস্তফা মাদানী (রহ.), [ যিনি মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রহ.)-এর পুত্র হযরত মাসুম রাব্বানী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলিফা ছিলেন ] এবং ১৫তম অধঃস্তন পুরুষ হলেন মোজাদ্দেদে জামান হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)।
হযরত সুফি ফতেহ আলী ওয়সী (রহ.) ছিলেন মোজাদ্দেদে জামান আববুবকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর পীর এবং চট্টগ্রামের প্রখ্যাত ওলি সুফি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.)-এর খলিফা। ইংরেজী ১৮২৫ খৃষ্টাব্দে বাংলা ১২৩২ হিজরী ১২৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলার ইসলামাবাদের সাতকানিয়া থানার আমীরাবাদের সৈয়দ মহল্লায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হযরত মাওলানা সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহ.) ১৮৩১ খৃষ্টাব্দের মে মাসে মুজাহিদে-আজম হযরত সৈয়দ আহমদ বেরেলভী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বালাকোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইংরৈজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে উভয়ে তথায় শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।
হযরত সুফি ফতেহ আলী ওয়সী (রহ.) ছিলেন মোজাদ্দেদে জামান আববুবকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর পীর এবং চট্টগ্রামের প্রখ্যাত ওলি সুফি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.)-এর খলিফা। ইংরেজী ১৮২৫ খৃষ্টাব্দে বাংলা ১২৩২ হিজরী ১২৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলার ইসলামাবাদের সাতকানিয়া থানার আমীরাবাদের সৈয়দ মহল্লায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হযরত মাওলানা সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহ.) ১৮৩১ খৃষ্টাব্দের মে মাসে মুজাহিদে-আজম হযরত সৈয়দ আহমদ বেরেলভী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বালাকোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইংরৈজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে উভয়ে তথায় শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।