প্রশ্নোত্তর

প্রথমত কুরবানী তথা আল্লাহর জন্য উদ্দেশ্য করে জিলহজ মাসের ১০,১১ অথবা ১২ তারিখে পশু যবেহ করা (যার সামর্থ্য আছে তার জন্য) অনেক উলামাদের মতে ওয়াজিব বা জরুরি। এছাড়াও অনেক উলামাদের মতে কুরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আদায় করলে খুবই বড় সাওয়াবের কাজ হবে। না করতে পারলে কোনো অপরাধ হবে না, এটা একটা মত। আমরা যারা ওয়াজিব বলছি, হাদীস অনুযায়ী বোঝা যায় যে— সকল খরচ বাদ দিয়ে যার কাছে পর্যাপ্ত টাকা অথবা স্বর্ণ গহনা আছে, যেটা খুব সহজেই বিক্রি করলে টাকা পাওয়া যায়। যার মূল্যমান কমপক্ষে ৫০ হাজার, তার জন্য কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে।
ঋণগ্রস্তের দুটো পর্যায় আছে, প্রথমত অনেকে টাকা পাবে। ঋণ পরিশোধ করতে গেলে হাতে যা আছে, তাও অবশিষ্ট থাকবে না। এরকম ব্যক্তির জন্য কুরবানী ওয়াজিব নয়। তারপরও যদি মনে করেন, কুরবানী করবো সাওয়াবের নিয়তে তবে সাওয়াব পাবেন। কিন্তু তার জন্য কুরবানী করা জরুরি নয়। দ্বিতীয়ত, কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত নন। কিন্তু কুরবানী করতে চাইলে তাকে ঋণ করতে হবে। তিনি পরবতীর্তে পরিশোধ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তার উপরেও ওয়াজিব হবে না কুরবানী। যদি তিনি আদায় করেন, তবে সাধারণ দানের মতোই সাওয়াব হবে। না করলে গুনাহ হবে না।
এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, অনেকে ঋণগ্রস্ত হওয়ার পরেও কুরবানী করেন লোকে খারাপ বলবে এই চিন্তায়। সেক্ষেত্রে কুরবানীই হবে না। কিন্তু যদি নিয়ত থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, দুনিয়ার সম্মান অসম্মান এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কুরবানী করলে সাওয়াব হবে। যদিও তার জন্য জরুরি নয়।
ঋণগ্রস্তের জন্য জরুরি হলো ঋণ শোধ করা। আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে সহজ করেছেন।

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য এবং দরুদ ও সালাম তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। বাস্তবতাটা হলো এক একটা ইবাদাতের এক এক বৈশিষ্ট্য আছে। কিছু কমন বিষয় আছে— যেটার বিকল্প হয়। আর কিছু বিষয় ইবাদতের, সেটা সুনির্ধারিত, বিকল্প আরেকটা হয় না।
কুরবানীটা পশুর সাথে সম্পৃক্ত যার সামর্থ্য সুযোগ আছে তিনি পশু কুরবানী দিবেন এটাই স্বাভাবিক। যদি কোনো ক্ষেত্রে দিতে না পারেন, সেটার প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু সেটা কুরবানীর বিকল্প হয় না। সেটা তার ওজরের ক্ষেত্রে বা সমস্যার ক্ষেত্রে জরুরি বিবেচনা।
কুরবানী হলো পশুই দিতে হবে অর্থাৎ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তিনি পশুই কুরবানী দিবেন সেটা উট, মহিষ বা গরুতে অংশ হোক অথবা আলাদা ছাগল হোক, ভেড়া হোক। আল্লাহ না করুন, যদি এরকম কারও হয় সে তার সামর্থ্য আছে কিন্তু কুরবানী দিতে পারছেন না সেক্ষেত্রে বিকল্প হলো তাদের আত্মীয়স্বজন গ্রামগঞ্জে কেউ না কেউ আছেন, তাদের মাধ্যমে কুরবানী দেয়া । আপনি শহরে দিতে পারছেন না। গ্রামে টাকা পাঠিয়ে দিলেন সেখানে পশু কিনে জবাই করে আত্মীয়স্বজন খেল গরিব মানুষরা খেল, সেটাও হক্ব আদায় হবে কুরবানী আদায় হবে। কিন্তু পশু জবাই না দিয়ে শুধু টাকা দান করে দিলেন কুরবানীর বিকল্প এটাতে কুরবানী আদায় হবে না।
যদি কেউ নাচার না করতে পারেন সেক্ষেত্রে তো সে আল্লাহর দরবারে মাজুর বা তিনি অসামর্থবান হিসেবে বিবেচিত হবেন। সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, তবে কুরবানীর বিকল্প টাকা দেওয়া এধরনের কোনো উদ্ভট কথাবার্তা কোনো মুমিন মুসলমানের পক্ষে আদৌও সমীচিন নয়।
আর যার ইমান নেই ইসলাম বোঝে না তাদের কথা ভিন্ন। আমরা এই বিষয়টা লক্ষ্য রাখব আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিধান অনুযায়ী উদহিয়্যা বা কুরবানী দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে শিখিয়েছেন উট, গরু, মহিষ এই পশুগুলোতে ৭ জনের পক্ষে দেওয়া যাবে। এখানে আমাদের সমাজে অনেক সময় “নামে” বলি , এটা একটা শব্দবিভ্রাট হয় বা ভুল হয়। আমরা যে কুরবানী করি মূলত আল্লাহ তা’য়ালার নামে হবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আর যেটা করছি এটা পক্ষে বলা হয় তাহলে সুন্দর ভাষা হবে। আমরা অনেক সময় বলি অমুকের নামে তো এক্ষেত্রে আমরা বলব অমুকের পক্ষে।
একটা গরু, একটা মহিষ বা উট এগুলো সাতজনের পক্ষে দেওয়া যাবে আর একজনের পক্ষে হলোÑ ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এটাই হলো স্বাভাবিক নিয়ম।
আমরা যারা শরিকানায় কুরবানী দেবো সেক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত অংশীদাররা হালাল রুজি করছেন কিনা এবং ব্যক্তিরা ভালো কিনা। তাদের নিয়তটা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিতে নাকি লোক দেখানো । যদি কুরবানীর পরে বুঝা যায় যে কারও নিয়ত খারাপ অথবা উপার্জন ঠিক নেই, সেক্ষেত্রে আমাদের কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ। যার যারটা সে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে হিসেবের বা বিচারের সম্মুখীন হবেন। অংশীদারদের কোন একজনের উপার্জন হারাম (সেটা ঘুষের টাকা, সুদের টাকা বা কারো থেকে আত্মসাৎ) এ সমস্ত ক্ষেত্রে যদি জেনে শুনে আমরা তাদেরকে সাথে নেই তাহলে কুরবানীটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর না জানার কারণে যদি হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন । আর উত্তম হবে যদি আমরা নিজেরাই নিজেদেরটা দিতে পারি, সব থেকে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন\

কিছুদিনের মধ্যে আমরা ঈদুল আযহা পেতে যাচ্ছি এবং এই সময় আমাদের একটি বড় ইবাদত হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কুরবানী দেওয়া। আরবীতে এটাকে উদহিয়্যা বলা হয়।
স্বাভাবিকভাবে উলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যারা এটাকে ওয়াজিব বা জরুরি বলেছেন— আমাদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব হচ্ছে বুঝার একটা উপায় হলো, আমাদের প্রতি যাকাত ফরয হচ্ছে কিনা? অর্থাৎ যার উপর যাকাত ফরয হয়েছে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে।
আর একটা মত হলোÑ যে, যার এই কুরবানীর সময় অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের ৯, ১০ তারিখ থেকে শুরু করে এই সময়ে যাবতীয় তার নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার খাবার দাবার ইত্যাদির বাইরে যদি সামর্থ থাকে যে তার সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে মোটামুটি যে টাকাপয়সা আছে বা সামর্থ আছে তাকে সে একটা ছাগল, ভেড়া বা গরুর একটা অংশ দিতে পারবেন এভাবে যদি সামর্থ থাকে ঋণ দেনা বাদ দিয়ে তাহলেও তার উপর ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান বাজারে যার সব খরচ বাদ দিয়ে পঞ্চাশ হাজারের উপরে যদি কারো কাছে ক্যাশ মানি থাকে তাহলে তার উপর এই কুরবানীটা দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে। এই পরিমাণ স্বর্ণ অলংকার যদি থাকে তাহলে তার উপর এই কুরবানীটা দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে। তিনি না করলে এক ধরনের গুনাহগার বলা যায়। আর এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় হলো প্রত্যেকের সম্পদ ব্যক্তিগতভাবে শরিয়তে হিসাব করা হয় সেটা স্ত্রী, স্বামী এবং বাচ্চার প্রত্যেকেরই আলাদাভাবে। । আল্লাহ তায়ালা সকলকে এই মাসলা খেয়াল করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন

আল্লাহ তা’আলা নাম ধরে উল্লেখ করেছেন হালাল (বৈধ) এবং হারাম (অবৈধ)। হালাল হলো যেটাতে মানুষের উপকার আছে ক্ষতি নাই। যদি পরিবর্তিত অবস্থায় ক্ষতিকারক হয়ে যায়, তখন ঐ হালালটাও হারামে রূপান্তর হয়ে যায়। যখন কোনো খাদ্যের গুণগত অবস্থার পরিবর্তন হয়, তখন সে খাদ্যের হুকুমও পরিবর্তন হয়। যেমন — আপেল,আঙ্গুর ভালো কিন্তু যখন পঁচে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে, দেখতে পাচ্ছি যে গন্ধ বের হচ্ছে, শরিয়তের দৃষ্টিতে উলামাদের ফতোয়া হলো এটাও খাওয়া যাবে না। যেহেতু এর মধ্যে পোকা আছে, খেলে পেট খারাপ হবে তখন এটা হারাম হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন তোমরা তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে বা ক্ষতির দিকে ধাবিত করো না।
তাহলে ঈমানদারের একটা কমন থিউরি থাকবে যে, যেই যেই জিনিসগুলো কুরআন হাদীসে নাম থাকুক আর না থাকুক এমনকি মূলে হালাল কিন্তু প্রেক্ষাপটে আমার জন্য ক্ষতিকারক হবে, আমি দেখতে পাচ্ছি বা বুঝতে পারছি ঐ সময়ের জন্য ঐটা হারাম। এটা হলো মূলনীতি। সেটা চা হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়ে যদি এমন চা হয়, যেটাতে আমি দেখতে পাচ্ছি পোকা পড়েছে বা কোন কারণে বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন এটা খেলে আমার শরীর খারাপ হবে, তখন যদি আমি বলি আল্লাহ হালাল করেছেন, খেয়ে নেই। না, এটা আল্লাহ অনুমোদন দেননি।
এজন্য শরিয়তের নীতিতে বিড়ি, জদার্, সিগারেটের বিষয়ে জমহুর উলামাদের মত হলো— এটা হারাম। সিগারেট/ বিড়ি যে কারণে ক্ষতিকারক সেইগুলো জর্দাতেও আছে, গুলেও আছে। কাজেই এই নীতিতে এটাও আমাদের জন্য খাওয়া উচিত হবে না। এটা ক্ষতিকারক, মাকরূহ তাহরীমের মধ্যে পড়বে। আরব দেশের উলামাদের মতে হারামের মধ্যে পড়বে। আমি বাংলাদেশের উলামাদের কথা বলছি অনেকে মাকরূহ তানযীহ বলেছেন, আবার অনেকে মাকরূহ তাহরীম বলেছেন। যার সারাংশ হলো— এটা খেলে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই আমাদের এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের হারাম খানা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মুমিন মুসলমানের একটি বড় ইবাদত হলো মসজিদের সাথে সম্পর্ক গড়া। যেহেতু হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানালেন— সাত শ্রেণির মানুষদেরকে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর ছায়াতে ছায়া দিবেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, যারা মাসজিদের সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ মাসজিদ কেন্দ্রীক ইবাদত করেন। মাসজিদে জামাতের সহিত নামায আদায় করেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অনেকেই কমবেশি মসজিদে সালাত আদায় করছি। বিশেষ করে বয়স্ক ভাইয়েরা আমরা করছি। কিন্তু যুবক বা কিশোরদের ব্যাপারে আমরা অনেকটাই অসচেতন, অবহেলা করি বরং কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট বাচ্চারা মসজিদে আসলে আমরা তাদেরকে ধমক দেই, অনেকে দূর দূর করেন। এটা গর্হিত কাজ।
 
আমরা যেটা হাদীসে পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সময় বাচ্চারা মাসজিদে যেতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতিরাও মসজিদে যেতেন, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাযের সময় তাঁর ঘাঁড়ে উঠেছেন এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নি। রাগারাগি, বকাঝকা করেননি বরং কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, তাঁর নাতিরা নামাযের সময় ঘাড়ের উপর উঠেছেন, তাঁরা না নামা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদা থেকে উঠেন নি। নিরিবিলি ছিলেন যেন সে নিজে থেকে নামলে তারপর সিজদা থেকে উঠবেন। 
এথেকে বোঝা যায় যে, বাচ্চাদের মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট করা এটা আমাদের জন্য খুবই দরকারী। যারা মোটামুটি একটু বুঝতে পারে, হাঁটা চলা করতে পারে, মানে কথা শুনে এরকম বাচ্চাদেরকে আমরা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
 
তার পাশাপাশি আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করা যে, আমরা যদি পারি বাচ্চাদেরকে উৎসাহিত করব বিভিন্নভাবে। কোথাও কোথাও আমরা শুনতে পাই যে, একটা রুটিন করে দেওয়া হয়।  ৭ বছরের উপরে বাচ্চারা নিয়মিত ৪০ দিন মসজিদে জামাতে নামায পড়তে পারলে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। এ রকম আমরাও নিজেদের সন্তান, আত্মীয় স্বজনদের সন্তান নিয়ে পারিবারিক ভাবে আয়োজন করতে পারি। যারা নিয়মিত ৪০ দিন মসজিদে জামাতে নামায পড়তে পারবে তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হবে। এছাড়াও মসজিদ ভিত্তিক হলে তো খুবই ভালো। এভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের আল্লাহমুখী করতে চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

বিয়ে শাদী করবেন দ্বীনদার দেখে। মেয়েরা বিয়ে—শাদী করবেন দ্বীনদার ছেলে দেখে। আল্লাহওয়ালা দ্বীনদার ছেলে দেখে বিয়ে করেন, আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন। আমার যুবকেরা দ্বীনদার মেয়ে দেখে বিয়ে করেন, আপনি শান্তি পাবেন। রূপ— সৌন্দর্য দেখতে হবে, বংশ, সম্পদ দেখে নিবেন ঠিক আছে কিন্তু সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে দ্বীনদারিতাকে। আপনি যে পাত্র—পাত্রী দেখতে যাবেন সেই পাত্র—পাত্রী নামায পড়ে কিনা, রোযা রাখে কিনা, হালাল হারাম বেছে চলে কি না, পর্দা করে কিনা এটা আগে জেনে নিবেন।
এখন আপনারা তথ্য দিচ্ছেন— মেয়ের নানী খুব পরহেজগার, মা খুব আল্লাহওয়ালা হজ্জ্ব করে এসেছে। হজ্জ্বের পর থেকে এই পর্যন্ত এমন পর্দা করে, কেউ দেখেনি । কিন্তু মেয়েতো মাশাল্লাহ কেউ আর দেখার বাকি নাই। এখন এই ধরনের মেয়ে আপনি নিয়ে আসলে কেমন করে পরিবারে শান্তি হবে। আবার ছেলের তথ্য পাওয়া যায়, ছেলের বাবা খুব ভালো, দাদাও বড় হাজী সাহেব কয়েকবার হজ্জ করে এসেছেন। পায়ে হেঁটেও হজ্জ্ব করেছেন আর ছেলের বাবাও ঘুষ খেয়ে অনেকবার হজ্জ করেছে । ছেলে চাকরিতে যত সামান্য বেতন পেলে কি হবে, উপরি বেতন অনেক আছে। তাহলে এরকম ছেলে বিয়ে করলে আপনার সংসার কি সুখের হবে!
বিয়ের জন্য পাত্র—পাত্রীর যখন প্রস্তাব আসে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছেলেদের বললেন— তোমরা একটু পরিপাটি হয়ে যাও, ভালো করে দেখে নাও। আর মেয়েদেরকে বললেন সেজেগুঁজে যাও, যাতে তোমাদেরকে পছন্দ করে। বিয়ে জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনি কার সাথে জীবনের বাকি সময়টা অতিবাহিত করবেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, পাত্র—পাত্রী বাছাইয়ের জন্য তার দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিন।

প্রথমত সুদ সুস্পষ্ট হারাম। সুদভিত্তিক ব্যাংক, এনজিও কিংবা এধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার ধরনের ব্যক্তির কথা বলেছেন, যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা অভিশাপ বর্ষিত হয়। তারা হলো যে সুদ দেয়, যে সুদ নেয়, যে সুদের স্বাক্ষী থাকে এবং সুদ লিখে দেয় যে।
দ্বিতীয়ত, হারাম কার্যক্ষেত্র থেকে উপার্জিত আয়ও হারাম। সুতরাং সূদী ব্যাংকে কর্মরতদের বেতনও বৈধ হবে না। আপনার ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হালাল উপার্জন। আপনি কি চাইবেন, আপনার সারাদিন পরিশ্রমের টাকাটা হারাম হোক! আপনার সন্তানরা হারাম উপার্জনের টাকায় মানুষ হোক। মুমিন হিসেবে কখনোই এটা কাম্য নয়। যারা অলরেডি জবে আছেন, তারা বিকল্প উৎস খুঁজে, বের হয়ে আসুন। একজন মুমিনের জন্য কখনোই উচিত হবে না সুদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। নিজেরা উদ্যোক্তা হোন। নিজের ও মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন। আল্লাহ তা’আলা ব্যবসায় বরকত দেবেন ইনশাআল্লাহ।

ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহ তা’আলার একক সত্ত্বায় বিশ্বাস করা। আল্লাহ তা’আলার কোনো শরীকানা নেই। এটাই আমাদের বিশ্বাস, এটাই আমাদের ভিত্তি।
এখন আসি পূজা প্রসঙ্গে। পূজায় কি হয়? আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়। যেটা আমাদের ঈমানের মূল বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। যেখানে আপনার রবকে অস্বীকার করা হচ্ছে, সে ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিলে আপনি কি নিজেকে ঈমানদার দাবি করতে পারেন। পারেন না।
পূজায় অংশ নেয়া কিংবা চাঁদা দেয়া হারাম। কবিরা গুনাহ। মূলনীতি হলো— অন্য ধর্মের যে কোন ধমীর্য় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, আপনার ঈমান হারানোর কারণ।
এখানে আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবো না। তাদের প্রতি দাওয়াতী মনোভাব রাখবো। সামাজিকভাবে বন্ধুত্ব হতে পারে। মুসলিম হিসেবে তাদের নিরাপত্তার জিম্মাদারও আমাদের। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের ধমীর্য় অনুষ্ঠানে অংশ নেবো।

মুসলিমরা হলেন সালামের হকদার। অমুসলিমরা নন। তাই আপনি কোন অমুসলিমকে সালাম না দিয়ে, অন্য কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে পারেন। কোন অমুসলিম যদি সালাম দিয়ে ফেলেন তবে উত্তরে শুধুমাত্র ‘‘ওয়া আলাইকুম” বলা যেতে পারে। আর কোন স্থানে মুসলিম ও অমুসলিম সবার জমায়েত থাকলে, সেক্ষেত্রে আপনি সালাম দিবেন। আর আদাব বা নমস্কার না বলাটাই উত্তম। এটা ওদের ধমীর্য় সম্ভাষণ। আমাদের নয়।

আলহামদুলিল্লাহ,খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছো। নবীরা যদি বলতে পারে যে, আল্লাহ আমাকে এমন রাজত্ব দাও আর কাউকে দিওনা, তাহলে তোমার বলতে অসুবিধাটা কি! কাজেই আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে হালাল ভাবে আপনার বিধান মোতাবেক সম্পদশালী করুন। এই দোয়া করলে কোন অসুবিধা নাই, আরবী জরুরী না, তুমি তোমার ভাষায় বলো। তবে সহজ দোয়া হল:
রব¦ানা আতিনা, ফিদদুনিয়্যা হাসানাতাও অফিল আখিরাতে হাসানাতাও, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দেন, আখিরাতেও কল্যাণ দেন।
আচ্ছা, আখিরাতে সব থেকে বড় কল্যাণ কি? জান্নাতে যাওয়া, তাই তো। তার থেকে বড় কল্যাণ? আল্লাহ তা’আলার দিদার। তবে জান্নাতে না গেলে তো, আল্লাহর দিদার হচ্ছে না। তাহলে আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করুন। জান্নাত আর দুনিয়া, কোনটা বড়? আল্লাহ তা’আলা নিজেই দয়া করে আমাকে জান্নাত দিবেন আর দুনিয়াটা তো আমার পায়ের নিচে এমনিই দিয়ে দিবেন, আলহামদুলিল্লাহ।
যা দরকার হালালভাবে মেধা খাটিয়ে, পরিশ্রম করে বের করে নাও, কোন অসুবিধা নাই। তবে যাকাতটা ঠিক ভাবে দিবে। যাকাত দিয়ে তুমি শত কোটি টাকার মালিক হও, হালাল উপার্জন করো, শরীয়তে কোন বাধা নেই । বরং আল্লাহ তা’আলা খুশি হবেন । বেশি বেশি দান খয়রাত করবে, বাড়ি বানাবে আর গরিব অসহায়দেরকে থাকতে দিবে। সাওয়ার বেশি হবে । মানুষের আকাঙ্খা থাকে সম্পদ হোক , অর্থ হোক।
প্রথমত পরিশ্রম করবে, হালাল পন্থায় ব্যাবসা করবে আর যোগ্যতা থাকলে ভালো জায়গায় চাকরি করার চেষ্টা করবে। টেকনিক্যালি মেধা ব্যবহার করবে, সততার সাথে ইনকামের চেষ্টা করবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। এগুলো হচ্ছে সহজ দোয়া আর শেষ রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, আখিরাতের জন্য বেশি বলা, তার সাথে দুনিয়ার কল্যাণ চাইবে, আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

শুধু আলেম বলে কথা নয়। কোন মানুষের ব্যক্তিগত দোষত্রুটি আলোচনা করা গীবত। কবীরা গুনাহ। সেটা আলেম হোক, সাধারণ মানুষ হোক, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক মানুষ হোক। যেই হোক না কেন। এমনকি অমুসলিমদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সমালোচনা করা কবীরা গুনাহ। এখন কোন আলেম যদি ভুল ফতওয়া দেয়, যেটা জাতীয় বিষয়। দলিল ভিত্তিক ভুল ফতওয়াটাকে সঠিক ফতওয়া দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। মূলনীতি হলো, সেক্ষেত্রে তার ভুলটা দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা। ব্যক্তিগত কোন আক্রমণ নয়। এবং তাকে অপমান করার কোন চেষ্টা না করা। নাম উল্লেখ করা ছাড়া বিষয়টা জনসাধারণের মাঝে উপস্থাপন করা। আর যদি তার প্রভাব এতটাই বেশি থাকে তবে তার ব্যক্তিগত সম্মান ঠিক রেখে, ভুলটা উল্লেখ করা এবং ভুলের সঠিকটা কি সেটা উল্লেখ করা। এটা হলো নসীহত। আর নসীহত ক্ষেত্রে বিশেষে ফরজ আবার কোন কোন সময় সুন্নাত। কোন কোন ক্ষেত্রে ফরজে আইন আবার কোন ক্ষেত্রে ফরজে কেফায়া। কিন্তু গীবত সর্বদা হারাম।

কবীরা গুনাহ করলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। হারাম কাজ করলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়। গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। বেশি বেশি তওবা করবেন এবং দুআ করবেন। রাব্বী জিদনী ইলমা। রাব্বিশ—রাহলি ছাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি ওয়াহলুল ওক্বদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি। এই দুআগুলো করবেন। না পারলে নিজের ভাষায় দুআ করবেন। আল্লাহ আমার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন। অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করে দেন। আল্লাহর কাছে দুআ করুন মনপ্রাণ খুলে। নিজের সমস্যাগুলো আল্লাহর কাছে বলুন। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খান। মধু, দুধ, খেজুর, কিশমিশ, বিভিন্ন বাদাম, খাবেন, এগুলো আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

ফরজ ওয়াজিব ঠিক মতো আদায় করবেন। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবেন। বেশি বেশি দরূদ শরীফ ও ইস্তেগফার পড়বেন। সত্যবাদী ভালো মানুষদের সাথী হবেন। ভালো আলেম, যারা সত্যবাদী, তাঁদের দরসে বসবেন। সম্পর্ক রাখবেন, এতে করে ভালো কাজ করার স্পৃহা বাড়বে। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবেন। খেয়াল রাখবেন আপনার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়।

প্রথমত যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদ করতে যেয়ে মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন শহীদ। এছাড়াও যারা দূর্ঘটনায় মারা যান, যদি ঈমানদার হয়ে থাকেন, তবে তাদেরকে আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দেন।

যার বিবাহ করার শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য আছে তিনি বিবাহ করবেন। যদি সামর্থ্য না থাকে তবে রোজা রাখবেন। বিবাহের কয়েকটি পর্যায় আছে। কারো জন্য বিবাহ ফরজ, কারো জন্য সুন্নাত, কারো জন্য নফল আবার কারো জন্য হারাম। এখানে নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে পরিবার পরিচালনার সামর্থ্য ও উপযুক্ততা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি যদি বিয়ের মাধ্যমে ইবাদতের নিয়ত করে যেমন— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণের নিয়ত করা কিংবা নেক সন্তান লাভের নিয়ত করা কিংবা নিজের চরিত্র, লজ্জাস্থান, চক্ষু, অন্তর ইত্যাদি হেফাযত করার নিয়ত করা, তাহলে এটির জন্য সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। আর যদি এমন কোন নিয়ত না করে তাহলে প্রয়াজনমূলক মুবাহ (বৈধ) কাজ হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য আলাদা করে কোন সওয়াবও নেই; গুনাহও নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

না, বৈধ হবে না। যে সকল শিক্ষকেরা তাদের নিয়ম ভঙ্গ করে ফুল টাইমের বেতন নিবেন, তাদের যে পরিমাণ নিয়ম ভঙ্গ হবে সে পরিমাণ বেতন হারাম। মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কিংবা ভার্সিটির যেখানের শিক্ষকই হোন না কেন! উপার্জন হারাম হয়ে যাবে। এর কাফফারা আদায় করতে হবে। বেশি বেশি ছাত্রদের নিধার্রিত ক্লাসের বাইরেও সময় দিয়ে উসূল করতে হবে। যে সময়টা ফাঁকি দিয়েছে, সে সময় হিসাব করে টাকাটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষককে জমা দিতে হবে। তা নাহলে এর হক আদায় হবে না। তবে তাও হবে কি না, সন্দেহ থেকে যায়! কারণ এটা আর্থিক লেনদেনের বিষয়। আর ছাত্রদের প্রাপ্য সময়টা যে নষ্ট হয়েছে, এর হক কিভাবে আদায় হবে? কিয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক ছাত্রর কাছে দাঁড়াতে হবে মাফ পাওয়ার জন্য। শিক্ষক হওয়া কি এতই সহজ। এটা সাধারণ কোন বিষয় নয়, ঈমান আকীদার ব্যাপার। তাকওয়া না থাকার ফল। আল্লাহ হেফাজত করুন আমাদের। হালাল উপার্জন করার তৌফিক দান করুন।

যদি কেউ নেক নিয়তে কোথাও দান করেন, তবে তিনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ। যদি পরে জানতে পারেন যে অনিয়ম হয়েছে। এটার ক্ষেত্রে আপনি দোষী না , আপনি সাওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। যারা এই অন্যায় করেছে, দায়ভার তাঁদের ঘাড়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। যদি বুঝতে পারেন যে , আপনার দান সঠিক ভাবে কাজে লাগছে না, তবে সে প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে দান করবেন না। যেটা দিয়ে ফেলেছেন সেটার জন্য ইনশাআল্লাহ আপনি সাওয়াব পাবেন। আর আপনার কাছে যদি অনিয়মের নিশ্চিত প্রমাণ থাকে, তবে চ্যালেঞ্জ করুন। যে কাজের জন্য দিয়েছেন হয় সেটা করে দেখাবে আপনাকে, না হয় টাকা ফেরত নিয়ে নেবেন। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।

ক্ষেত্রে বিশেষে সুর দিয়ে দুআ করা যাবে না, বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় শ্রম্নতিমধুরতার জন্য সুর দিয়ে দুআ করা যেতে পারে। এটা নাজায়েজ নয়। তবে, অহংকার অহমিকা বা নিজের আমিত্ব প্রকাশের জন্য, কিংবা সুর দিয়ে আকৃষ্ট করার চিন্তাটা গুনাহ। এ ধরনের ওয়াসওয়াসা যেন আমাদের মধ্যে না আসে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের দুআগুলো কবুল করুন। আমিন।

ওসীলার শাব্দিক অর্থ নৈকট্যতা। অনেক সময় আমরা এটা পরিভাষা হিসেবেও ব্যহার করি। এক্ষেত্রে আমাদের আকীদা কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জীবদ্দশায় সাহাবারা ওসীলা করেছেন। যে রাসূলুল্লাহ সা. দুআ করেছেন। এরপর তাঁরা ওসীলা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের দুআর ওসীলা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের পরে সাহাবারা ওসীলা করেছেন। শব্দগুলো এমন যে হযরত ওমর রা. হযরত আব্বাসের দ্বারা ওসীলা করেছেন। এরকম হাদীসের বর্ণনা। যেটা আমরা হাদীসের বর্ণনা থেকে পাই। ইস্তিসকার সালাত। এই ক্ষেত্রে ওসীলা হলো, কোন ভালো মানুষ যাদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে , এধরনের কোন ব্যক্তিবর্গের কাছে নিজেদের বিষয়ে আল্লাহর কাছে বলার জন্য দু’আ চাওয়া। পরবতীর্তে আল্লাহকে বলা যে ওমুককে আমার জন্য ওসীলা কবুল করেন। এটা সুন্নাহ সম্মত।
আরেকটা হলো আমি কাওকে কিছু বলি নাই কিন্তু আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখদের প্রতি ভক্তি আছে, তাদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে সুধারণা পোষণ করি। খেয়াল যদি থাকে এরকম, আল্লাহ আপনার প্রিয় বান্দাদের ভালোবাসি আপনার জন্য, এভালোবাসার উসীলায় আমাদের দুআ কবুল করুন। এটা বৈধ জায়েজ।
তবে যদি এমন হয় যে আল্লাহ পীর/ দয়াল বাবাকে দিবে আর বাবা আমাকে দিবেন। তবে বিলকুল হারাম। যদি মনে করেন যে আল্লাহ সরাসরি দিতে পারেন না, আগে বাবার কাছে চাইতে হবে। বাবার ওসীলায় সব পাওয়া যায়। তা হবে স্পষ্ট শিরক। ঈমান থাকবে না। আল্লাহ আমাদের ঈমান ও আমলের হেফাজত করুন।

কোন ব্যক্তি মারা গেলে দিন ধার্য করে অনুষ্ঠান করা বাড়িতে হোক বা অন্য কোথাও হোক; এই ধরনের কোন নিয়ম শরীয়তে নেই। তিন দিন, দশ দিন, চল্লিশ দিন কিংবা বছর ঘুরলে ঐ তারিখে মৃত্যুবার্ষিকী। এই ধরনের কোন বিধান ইসলামে নেই। যেটা আছে, সেটা হলো মৃত মানুষের পক্ষে জীবিতরা দুআ করবে আর সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী দান করবেন। সেই দান খয়রাতটা যদি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে হয়, দিন ধার্য না করে তবে আশা করা যায় শরীয়তের কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না। টাকাও দিতে পারি, চালও দিতে পারি আবার দশজনকে ডেকে খাওয়াতে পারি। কিন্তু যদি মনে করা হয় এই তিন দিন, দশ দিন, চল্লিশ দিনে আয়োজন করা দরকার, না করলে আমাদের আমল কম হলো। এটাকে সাওয়াব বা নিয়ম মনে করে যদি করা হয়, তবে এটা বিদআত হবে। গোনাহর কাজ হবে। এটাকে দ্বীন বানানো হলো, সাওয়াবের কাজ মনে করলো যেটা আল্লাহর দ্বীন বানান নি। এজন্য আমরা দান খয়রাত করবো। সাওয়াবের নিয়তে গরিব অসহায় এবং আত্নীয় স্বজনকে খাবার খাওয়াবো। কুরবানীতে মৃত আত্নীয় স্বজনের উদ্দেশ্যে কুরবানী দিলে তারা সাওয়াব পাবেন। উত্তম হলো সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পাওয়া যায় এমন ভাবে দান খয়রাত করবেন।

হালাল রিযকের জন্য আল্লাহ তা’আলার গুণময় কয়েকটি নাম ইয়া রাজ্জাকু, ইয়া ফাত্তাহু, ইয়া ওদুদু এই নামগুলো বেশি বেশি পড়বেন। দরুদ শরীফ বেশি বেশি পড়বেন। নফল নামাজ এই নিয়তে পড়বেন যে আল্লাহ আপনার রিযকে যেন বরকত দেন। হালাল রুযির ব্যবস্থা করে দেবেন আল্লাহ, ইনশাআল্লাহ।

বোন, নেক সন্তানের জন্য দুআ করবেন সবসময়। নামাজ কাযা করবেন না। নিজে ব্যক্তিগত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবেন। গীবত, পরনিন্দা—পরচর্চা হয় এমন আড্ডায় বসবেন না। যখন আপনি গর্ভধারিনী হবেন, অন্যায় কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবেন। ইস্তেগফার, কুরআন তিলাওয়াত, তসবিহ তাহলিলে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন। অশ্লীল গান বাজনা, নাটক—সিনেমা শোনা বা দেখা থেকে বিরত থাকবেন। কুরআনে বর্ণিত তিনটি দুআ বেশি বেশি করবেন—
দুআ— ০১: ‘রব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন’
[ হে আমার রব! আমাকে সৎ, কর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন।] (সূরা আস সাফফাত, আয়াত : ১০০)।
দুআ— ০২: ‘রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউদ দোয়া’
[ হে আমার রব! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থণা শ্রবণকারী]
(সূরা আল—ইমরান : আয়াত ৩৮)।
দুআ— ০৩: ‘রব্বানা—হাবলানা—মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররতা আ’ইউনিউ ওজা আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’
[ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দাও। ] (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)।

এটা একটা সামাজিক পারিবারিক মানসিক রোগ। ভবিষ্যতের চিন্তায় বিভোর না হয়ে বর্তমানকে কাজে লাগান। যে সকল ভাইয়েরা একটু হতাশা গ্রস্থ হচ্ছেন, কুরআনের সাথে লেগে থাকুন। যখনই মন খারাপ হয় কুরআন খুলুন, যে আয়াতটি সামনে পড়ে তিলাওয়াত করুন। বাংলা অনুবাদটা পড়–ন। দেখবেন মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে। জামাতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে সচেতন হন। অবসর সময়টা দুঃশ্চিন্তা না করে মাসনুন যিকরগুলো করুন। নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখুন। পাশাপাশি চেষ্টা করবেন, ভালো আলেম ওলামাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে। আপনার সমস্যাগুলো তাঁর সাথে শেয়ার করুন। ইনশাআল্লাহ তিনি আপনার সমাধানের পথ বাতলে দিবেন, কুরআন সুন্নাহর আলোকে।