মাওলানা নজমুস সায়াদাত সিদ্দিকী (রহ.)

হযরত মাওলানা নজমুস্ সায়াদাত সিদ্দিকী (রহ.)

হযরত মাওলানা নজমুস্ সায়াদাত সিদ্দিকী (রহ.) হযরত মাওলানা আবূ বকর সিদ্দিকী (রহ.) এর চতুর্থ সাহেবজাদা ছিলেন। তিনি নহুযূর নামে প্রসিদ্ধ। ন-হুযূর বাংলা ১৩১৮ সাল মুতাবিক ইংরেজী ১৯১৩ এবং হিজরী ১৩৩৩ সনের রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন।

পীরযাদা মাওলানা বাকীবিল্লাহ সিদ্দিকী তাঁর দাদী আম্মার জবানী থেকে বর্ণনা করেনঃ আমার আব্বা হুযূরের বিলাদাতের সময় দাদীজী তিনদিন অত্যাধিক প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে ফজরের সময় পুত্র সন্তান প্রসব করেন। সন্তান হওয়ার পর স্বাভাবিক নড়াচড়া বা কান্নার শব্দ না পেয়ে সকলের ধারণা হয় মৃত সন্তান হয়েছে। সে ধারণায় শিশু নহুযুরকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। সকলের তুলনায় দাদীজী অত্যধিক বিচলিত হয়ে পড়েন। কিন্তু দাদাজান কিছুমাত্র বিচলিত হননি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকালে মাইয়াতের দাফন-কাফনের ব্যবস্থার জন্য মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর অনুমতি প্রার্থনা করত তিনি বলেন-আসরবাদ ব্যবস্থা করা যাবে।

আল্লাহজাল্লা শানুহুর মহান ইচ্ছা! আসরের সময় হঠাৎ কাপড় ঢাকা শিশুর ‘তিনবার অস্পষ্ট শব্দে সবাই চমকে উঠলেন। অতঃপর কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। লোকেরা ইতস্তত করছেন কি ব্যাপার বোঝার আগেই ইতিপূর্বে ঘোষিত মৃত শিশু কাপড়ের ভিতর নড়ে উঠলেন। তখন কাপড় সরিয়ে লোকজন কোলে তুলে নিল। পরে তার আম্মা তাকে কোলে নেন। সকলে বলতে থাকে: আল্লাহ তোহফা দিয়েছেন।

ন’হুযূর খানদানী রেওয়ায মুতাবিক গৃহশিক্ষকের কাছে ইবতেদায়ী তা’লীম হাসিল করেন। অতঃপর তিনি কলকাতা মাদ্রাসা আলীয়ায় অধ্যয়ন করেন। প্রখর মেধা ও স্মৃতিধর নহুযূর মাদ্রাসা আলীয়ায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে পড়াশুনা সমাপ্ত করেন। ফারিগ হওয়ার পর তিনি মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর আদেশে ৪/৫ মাস চাকরি (ম্যারেজ রেজিষ্টার) করেন। চাকরি ত্যাগ করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলতেন: কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত আদায় করার উদ্দেশ্যই চাকরি করা। নায়েবী নবীর সার্থক উত্তরাধিকারী নহুযর।

যৌবন বয়সে তিনি ঘোড়-সওয়ার, কুস্তি, লাঠিখেলা প্রভৃতি পছন্দ করতেন। এমন কি তিনি চাষের কাজে অংশ নিয়েছেন। সেলাইয়ের মেশিন কিনে সেলাই করেছেন, সুন্নত নিয়তে খেজুরের পাতার চাটাইতে নিদ্রা গেছেন। প্রসঙ্গত তিনি বলতেন: এ সব করেছি কেবল নবীপাকের সুন্নত নিয়তে, চাটাইতে শুলেই কি সুন্নত আদায় করা হবে? কখনই না। তাহলে তো সাওতালরাও চাটাইয়ে শুয়ে থাকে। বাবা! আমল আর নিয়ত এক হওয়া চাই।

ওয়ায-নসিহতে দাওয়াতের রাস্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে লওয়া প্রসঙ্গে তিনি একদিন বলেন: এক হাজি সাহেব দাওয়াত করে নিয়ে গেছেন। হাজি সাহেবের বাড়িতে যেয়ে বুঝতে পারলাম, খুবই গড়বড়, খাওয়া যাবে না। জলসার জায়গা দূরে। আমি হিকমত করে বললাম, আমার আদত জলসার জায়গায় থাকব, সেখানে খাব। হাজি সাহেব নাস্তা আনলে আমি খেতে অস্বীকার করলাম। হাজি সাহেব পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। হুযূর কেন খাবেন না?

লোকেরা বুঝতে পেরেছে, হাজি সাহেব পাল্লায় পড়ে গেছেন। আমি এত লোকের মাঝে না বলে, হাজি সাহেবকে ঘরের মধ্যে ডেকে বললাম: কি হাজি সাহেব, এক মন দিয়ে দেড়মণ নেন্ কি না ? হাজি সাহেব বললেন, হ্যাঁ হুযূর! আলেমরা তো কিছু বলে না। আমি তওবা করছি। আমি বললাম-তওবা করুন, কিন্তু খাওয়া যাবে না বাবা! এমন খাদ্য খেয়ে আল্লাহ্ পাওয়া যাবে কি?

তিনি আরও বলেন: আমার আর ভাইয়েরা দাওয়াতে যাচ্ছেন। হিদায়েতের রাস্তায় লোকদের ডাকছেন, আমি যাই না। আমার আম্মা একদিন আব্বা হুজুরকে বলেন: আমার কচির (তাঁর ডাক নাম) উপায় কি হবে? হযূর বলেন- ওকে যেতে বলি, রাযি হয় না। আম্মা বলেন: ওর চলবে কি করে? হুযূর দোয়া করুন। আব্বাজান (মোজাদ্দেদে জামান) বলেন: আমি ওকে আল্লাহর রাস্তায় হাওলা করে দিয়েছি। অন্য সময় তিনি বলেন: এ ছেলে আমার আখিরী জামানার পুঁজী।

অতঃপর নহুযূর বলেন: আমার পীরের কারামত বাবা! আমি কানে শুনেছি, দিলে বিশ্বাস করেছি, আর চোখে দেখছি। তিনি অত্যন্ত যোশের সঙ্গে ক্ষেদ করে বলেন: বান্দা! না আমার বাদর? ইসালে সওয়াবে মানুষ দেখতে পাচ্ছি না। হারাম-হালাল চিন্তা আগে। ৬০ বছর মেহনত করে যা পেলে, হারাম খেয়ে নষ্ট করলে? একটি মুসলমানের কত শক্তি জানো? সারা দুনিয়ার মানুষ যদি তাঁর বিরুদ্ধে যায়, তবুও পারবে না। যদি তোমার ঈমান থাকে, একটা পশমও হেলাতে পারবে না।

আখিরী জামানার উন্মতের দরজা কি জানো? নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেনঃ আমার ও তোমাদের মধ্যে কেবল একটি দরজা তফাৎ হবে।

প্রসঙ্গত তিনি আরও ইরশাদ করেন: জুলমতি হাওয়া বেশি, না রহমতি হাওয়া? দুনিয়া দুনিয়া কর, আর বল নামাজে মন বসে না। বিজ্ঞান সব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিদ্যুৎ বাতির সুইচ টিপলে বাতি জ্বলবে। কিন্তু আপনার জ্বললো না, অন্যের জ্বলছে! মিস্ত্রীকে ডেকে দেখালেন, সব ঠিক আছে, কিন্তু বাল্ব ফিউজ। তখন ভালো বাল্ব দিলেই জ্বলবে। আল্লাহ পাক সব সময় বান্দার নজদিকে মওজুদ আছেন। তোমার কলব (বাল্ব) খারাপ হয়ে গেছে। নিজের কলব নিজে ক্ষতি করেছেন। আল্লাহপাক মেরামত করার ব্যবস্থা দিয়েছেন। আল্লাহু বলেছেন : বান্দা তোমরা নাউম্মিদ হয়ো না। কলেমার যিকর করতে করতে দিল সাফ হবে।

৭ জানুয়ারী ১৯৮২, ১১ রবিউল আওয়াল ১৪০২ হিজরী, ২২ পৌষ ১৩৮৮ সাল বৃহস্পতিবার ২-৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।

হযরত জুলফিকার আলী সিদ্দিকী (রহ.)

হযরত মাওলানা আবুল বাসার মুহাম্মদ জুলফিকার আলী সিদ্দিকী (রহ.) হযরত মাওলানা আবুল বাসার মুহাম্মদ জুলফিকার আলী সিদ্দিকী (রহ.) মোজাদ্দেদে-জামান (রহ.) এর কনিষ্ঠ সাহেবজাদা। মোজাদ্দেদে জামান

Read More »

মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী (রহ.)

হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের সিদ্দিকী (রহ.) মুজাহিদে মিল্লাত, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের সিদ্দিকী (সেজ হযুর) মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর তৃতীয় সাহেবজাদা। তিনি অনুমান বাংলা

Read More »

আল্লামা মুফতি আবু জাফর সিদ্দিকী (রহ.)

হযরত আল্লামা আবূ জাফর মুহাম্মদ অজিহদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.) হযরত আল্লামা আবূ জাফর মুহাম্মদ অজিহদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.) ছিলেন মুজাদ্দিদে জামান (রা.) এর দ্বিতীয় সাহেবযাদা। তিনি ৪ঠা

Read More »