হযরত আল্লামা আবূ জাফর মুহাম্মদ অজিহদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.)
হযরত আল্লামা আবূ জাফর মুহাম্মদ অজিহদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.) ছিলেন মুজাদ্দিদে জামান (রা.) এর দ্বিতীয় সাহেবযাদা। তিনি ৪ঠা জানুয়ারি ১৯০৫ সাল মুতাবিক বাংলা ১৩১১ কিংবা ১৩১২ সালে ফুরফুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘মেজ হুযুর’ নামে সমধিক খ্যাত। তিনি ফুরফুরা ফতেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে জুনিয়ার পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা মাদ্রাসা আলীয়ায় অধ্যয়ন করেন। মাদ্রাসা আলীয়ায় জামাতে ’উলা পাঁচ বছর এবং টাইটেল তিন বছরের কোর্স অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সমাপ্ত করে ইংরেজী ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সাথে ফারেগ হন। সে সময়ের বিখ্যাত বুজুর্গ আল্লামা সফিউল্লাহ (রহ.)-এর মাদ্রাসা আলীয়ার হেড মাওলানা ছিলেন। শামসুল ওলামা আল্লামা গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.)-এর পুত্র হযরত মাওলানা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দীন (রহ.) ছিলেন তাঁর সহপাঠি।
ছাত্র জীবনে তিনি ফার্সি-উর্দু ভাষায় ভাল মজমুন লিখতেন। শের, আশয়ার না’ত লিখতেন। বাংলা, উর্দু বিভিন্ন পুস্তকে তাঁর শের ও না’ত দেখতে পাই। আরবি ও ফার্সি ভাষায় তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) তাঁকে বলতেন : বাবা। কিতাব বিনি কর, ইলম আলমারিতে আছে। আমার কাছ থেকে কিতাবের সনদ নাও।” এরপর থেকে তিনি মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) এর নিজস্ব লাইব্রেরীতে সংগৃহীত কিতাব মুতালা’আ করতে থাকেন এবং তাঁর কাছ থেকে ২০/২১ খানা কিতাবের ‘সনদ’ লাভ করেন। চৌদ্দ বছরে মাদ্রাসার শিক্ষা সমাপ্ত করে দীর্ঘ ৫/৬ বছর বিভিন্ন কেতাব ‘বিনি’ (গভীর অধ্যয়ন) করতে থাকেন।
মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) মেজ হুযূরকে ‘জমিয়তে ওলামা বাংলা ও আসামের’ মুফতী নিযুক্ত করেন। ১৩৫১ হিজরী ৪ঠা জিলকদ বুধবার কলকাতা থেকে জাহাজে হজ্জে রওনা দেওয়ার প্রক্কালে তিনি ঘোষণা করেন : “আমি ইলমের জাহাজকে (মেজ হযূরকে) দরিয়ায় ভাসিয়ে দিলাম।”
মেজ হুযূর স্বীয় আব্বা, পীর ও মুর্শিদের খেদমতে সুদীর্ঘ ১৪/১৫ বছর তা’লীম গ্রহণ করে খিলাফতপ্রাপ্ত হন। সকাল-সন্ধ্যা মুরাকাবা-মুশাহাদা করা ও লোকদের করানো তার নিত্য নিয়ম ছিল। তাঁর ওযিফা জীবনে বাদ পড়েছে বলে জানা নেই।
তাবাকাতুল-ইজাম (উর্দু), মিন্নাতুল মোগিস (উর্দু), আল মৌজুয়াত (উর্দু), নসিহাতুন্নবী, তাহকিকুল মাসায়েল প্রভৃতি অর্ধ শতাধিক বই-পুস্তকের তিনি প্রণেতা এবং তাঁরই আদেশ ও তত্ত্ববধানে প্রকাশিত হয়।
তিনি ওয়ায-নসিহতে বাংলা-আসামে অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার হাজার হাজার মুরিদের মধ্যে আলেম-ফাজিলের সংখ্যা অনেক। ইন্তেকালের পর তাঁকে ফুরফুরাতেই দাফন করা হয়।