ফুরফুরার পীরসাহেবগণ
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই, কুনিয়াত আবু নসর, বংশীয় উপাধী সিদ্দিকী।
উপমহাদেশের একজন মুহাককিক আলেম, বিখ্যাত ওয়াইজ, সমাজ সংস্কারক, হাক্কানী পীর ও সুফি; উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁহার বিশেষ অবদান ছিল। ১৩২৩/ ১৯০৩ পৌষ ১৩১০ বঙ্গাব্দে তিনি ভারতের পশ্চিম বাংলার হুগলী জেলার ফুরফুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম মাওলানা শাহ সুফি আবু বাকর সিদ্দিকী (রহ.) যিনি আমীরুশ শারীআত ও মুজাদ্দিদ-ই যামান বলিয়া খ্যাত। তাঁহার মাতা নেজিয়া খাতুনও বিদূষী মহিলা ছিলেন। কথিত আছে যে, পিতা ও মাতা উভয়েরই বংশীয় নিসবাত ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর সহিত রহিয়াছে। সেই কারণে তাঁহারা সিদ্দিকী উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। আব্দুল হাই পিতার জেষ্ঠ্য পুত্র। তাঁহার লেখাপড়া শুরু হয় গৃহে মাতার কাছে। ৬ বৎসর বয়সে তাঁহাকে ফুরফুরা মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। এখান হইতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তাহাকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করিয়া দেওয়া হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া তিনি পিতার সান্নিধ্যে থাকিয়া ইলম-ই জাহির ও ইলম-ই বাতিন এর উপর প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বাংলা ১৩৩০ সনে তিনি পিতার সহিত হজ্জ ও যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মক্কা মুআজজামা ও মদীনা মুনাওয়ারায় যান। দেশে প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি পিতার সহিত বাংলা ও আসামের বিভিন্ন স্থানে যাইয়া ইসলাম প্রচার করিতে থাকেন। দীনী জলসা ও মাহফিলে পিতার সহিত যোগদান করিয়া তিনি লক্ষ মানুষের সামনে ওয়াজ-নাসীহাত করিতেন। কুরআন হাদীস, ফিকহ, আকাইদ, মানতিক, ফালসাফা, ইতিহাস এবং কাব্য সাহিত্যে তিনি বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ফারসী এবং উর্দূ কাব্যেও তাঁহার দখল ছিল।
তাঁহার পিতার ইন্তিকালে (২৫শে মুহাররাম ১৩৪৫/১৭ই মার্চ ১৯৩৯) তিনি পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং পিতার আরদ্ধ কার্যাবলী সম্পন্ন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পিতার ন্যায় তিনিও শিরক, বিদআত ও কুফরীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। সমাজে বিরাজিত যাবতীয় অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার ও ইসলাম বিরোধী আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন। খৃষ্টান মিশনারীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও তিনি রুখিয়া দাঁড়ান।
তাঁহার পিতার ইন্তেকালে আঞ্জুমানে ওয়ায়েজীন ও জমিয়তে ওলামায়ে বাংলার সভাপতির দায়িত্ব তাঁহার উপর অর্পিত হয়। এই সময় যশোর, নদীয়া, দিনাজপুর বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে খৃষ্টান মহিলা মিশনারীরা পলদীতে যাইয়া সরলমনা মুসলিম মহিলাদেরকে খৃষ্টান বানাইবার চেষ্টা করিতেছিল। তিনি আঞ্জুমানে ওয়ায়েজনি এর সদস্যগণ এ সমস্ত অঞ্চলে প্রেরণ করেন। ফলে খৃষ্টান মিশনারীদের এ প্রচেষ্টা অনেকটা ব্যর্থ হয়। তাঁহার নেতৃত্বে জমিয়ত ওলামা ভারতে মুসলিম স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। তদান্তীন নিখিল বাংলা ও আসামে তাঁহার নেতৃত্বে জমিয়তে ওলামা শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়। জমিয়তে ওলামায়ে বাংলার লক্ষ্য ছিল শারী আতী সমাজ গঠন ও স্বাধীনতা অর্জন। ১৯৪৬ খৃষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে, পশ্চিম বাংলা, আসাম ও পূর্ববংগ (বর্তমান বাংলাদেশ) হইতে পাকিস্তান সমর্থনকারীদের সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন লাভের পশ্চাতে তাঁহার অশেষ অবদান ছিল।
তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন ঃ জমিয়তে ওলাময়ে হানাফীয়া, সিদ্দিকীয়া নূরুল ইসলাম বায়তুল মাল, হিযবুল্লাহ প্রভৃতি। মানবজাতির কল্যাণে তিনি নিবেদিত ছিলেন। তাই তিনি ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে খেদমতে খালক ও ইশাআতে ইসলামের জন্য শেষোক্ত সংগঠন বিশ্ব ইসলামে মিশন কুরআন কুরআনী সুন্নীজমতুল ঈয়তুল মুসলিমীন হিযবুল্লাহ গঠন করেন। লিখনী, বক্তৃতা, পত্রিকা প্রকাশ, গবেষণা ও মানব সেবার মাধ্যমে সুন্দর ব্যবহার ও হিকমাতের সহিত মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
তিনি বাংলা ভাষায় পত্র পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগও গ্রহণ করেন। আশ্বিন ১৩৫০/ রামদান ১৯৬২ সালে তাঁহার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কলকাতা হইতে নেদায়ে ইসলাম নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। অদ্যাবধি কলকাতা ও ঢাকা হইতে পৃথক পৃথক ভাবে এই মাসিক পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হইতেছে। ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে ঢাকা হইতে তাঁহার নির্দেশে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক মানবতা। তাঁহার রচিত বহু প্রবন্ধ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে। তাঁহার নির্দেশে ও তত্বাবধানে প্রচুর ইসলামী পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। নারীশিক্ষার প্রতি তিনি অত্যাধিক জোর দিতেন। তিনি বলিতেন, কেবল মাত্র পুরুষ শিক্ষা ও প্রগতির দ্বারা সমাজের জাগরণ আসে না। নারী জাতিরও শিক্ষা সংস্কারের বিশেষ প্রয়োজন। [সিরাজুল ইসলাম হযরত মওলানা আবদুল হাই সিদ্দিকী (রহ.) এর জীবন ও বাণী পৃ .৩১]।
তাঁহার পৃষ্ঠপোকতায় ফুরফুরার অদূরে অবস্থিত চকতাজপুর নামক স্থানে পশ্চিম বংগ সিদ্দীকা গার্লস হাই মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাদরাসার ছাত্রীদে জন্য ইহার সংলগ্ন ছাত্রীবাসও নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে ভারত বিভক্তির পর ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র কলকাতা আলিয়া মাদরাসা ঢাকায় স্থানান্তরিত হইলে পশ্চিম বাংলার মুসলমানরা ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে এক সংকটের সম্মুখীন হয়। তাঁহার প্রচেষ্টায় ভারত সরকার পুনরায় কলকাতা আলিয়া মাদরাসা চালু করেন। পুনরায় মাদ্রাসা বোর্ড ও মাদ্রাসাসুমুহ সরকারী নিয়ন্ত্রণে আসে। (দ্র..কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্র পরিচিত, ১৯৭১)।
ওলানা আদুল হাই সিদ্দিকী পশ্চিম বংগ, আসাম, বিহার ও বাংলাদেশ-এর লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্তরকে ইলম-ই তাসাওউফ-এর শিক্ষা দ্বারা উদ্ভাসিত করিয়াছেন। তাঁহার মুরীদের সংখ্যা অসংখ্য। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য স্থানেও তাঁহার ভক্ত ও মুরিদ আছে। তিনি মুরিদগণকে কাদিরিয়া, নাকশাবন্দীয়া, মুজাদ্দেদিয়া ও মুহাম্মাদীয়া তারীকার সবক দিতেন।
বিভিন্ন স্থানে তিনি খানকাহ্ স্থাপন করেন। পাবনা জেলার পাকশীতে স্থাপন করেন, একশত স্তম্ভ বিশিষ্ট একটি খানকাহ। ইহার নাম রিয়াযুল জান্নাত। ঢাকার মীরপুর এলাকায় অবস্থিত দারুস্সালামেও তিনি একটি খানকাহ স্থাপন করেন। এই খানকাহতে প্রতি বৎসর ইসালে ছাওয়াব-এর মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি একজন শ্রেষ্ঠ ওয়াইজ ছিলেন। তাঁহার ওয়াজ শুনিবার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড় জমিত। সকল শ্রেণীর মানুষের অন্তরে তাঁহার ওয়াজ এমনভাবে রেখাপাত করিত যে, শ্রবণকারীর অনেকেই সত্যিকারের ইসলামী যিন্দিগীতে ফিরিয়া আসে। আজীবন তিনি দীন ইসলামের বাণী পৌঁছাইবার উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে ভারতের নানা জায়গায় এবং বাংলাদেশের গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে ওয়াজ নাসীহাত করিয়া মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করিয়াছেন। তিনি তাঁহার অধিকাংশ সভাতেই কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে বক্তব্য রাখিতেন। রাজনীতিও বাদ যাইত না। তিনি বলিতেন: স্বাধীনতা ও মানবতা দুইটি কথা। যেখানে স্বাধীনতা নাই, সেখানে মানবতা নাই। আর মানবতাহীন স্বাধীনতা মুল্যহীন (দ্র. মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, হযরত মাওলানা আব্দুল-হাই সিদ্দিকী (রহ.) এর জীবন ও বাণী, পৃঃ ১৩৭, কলকাতা, মার্চ ১৯৮৩) তিনি অত্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপন করিতেন। তিনি ১৯৬৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার হজ্জ পালন করেন। ১৯৭৭ খৃষ্টাব্দের ১২ই মে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হইয়া তিনি কলকাতার সেন্ট মারিস নার্সিং হোমে ভর্তি হন এবং ২৪শে জুমাদা’ল-আওওয়াল ১৩৯৭/ ১৩ই মে ১৯৭৭ /৩০ শে বৈশাখ ১৩৮৪ শুক্রবার দিবাগত রাতে ১১ ঘটিয়ায় উক্ত নার্সিং হোমেই ইন্তেকাল করেন। ১৪ই মে রবিবার অপরােহ্ন তাঁহাকে ফুরফুরা গ্রামে তাঁহার পিতার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
হযরত আল্লামা আবূ জাফর মুহাম্মদ অজিহদ্দীন সিদ্দিকী (রহ.) ছিলেন মুজাদ্দিদে জামান (রা.) এর দ্বিতীয় সাহেবযাদা। তিনি ৪ঠা জানুয়ারি ১৯০৫ সাল মুতাবিক বাংলা ১৩১১ কিংবা ১৩১২ সালে ফুরফুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘মেজ হুযুর’ নামে সমধিক খ্যাত। তিনি ফুরফুরা ফতেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে জুনিয়ার পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা মাদ্রাসা আলীয়ায় অধ্যয়ন করেন। মাদ্রাসা আলীয়ায় জামাতে ’উলা পাঁচ বছর এবং টাইটেল তিন বছরের কোর্স অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সমাপ্ত করে ইংরেজী ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সাথে ফারেগ হন। সে সময়ের বিখ্যাত বুজুর্গ আল্লামা সফিউল্লাহ (রহ.)-এর মাদ্রাসা আলীয়ার হেড মাওলানা ছিলেন। শামসুল ওলামা আল্লামা গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.)-এর পুত্র হযরত মাওলানা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দীন (রহ.) ছিলেন তাঁর সহপাঠি।
ছাত্র জীবনে তিনি ফার্সি-উর্দু ভাষায় ভাল মজমুন লিখতেন। শের, আশয়ার না’ত লিখতেন। বাংলা, উর্দু বিভিন্ন পুস্তকে তাঁর শের ও না’ত দেখতে পাই। আরবি ও ফার্সি ভাষায় তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) তাঁকে বলতেন : বাবা। কিতাব বিনি কর, ইলম আলমারিতে আছে। আমার কাছ থেকে কিতাবের সনদ নাও।” এরপর থেকে তিনি মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) এর নিজস্ব লাইব্রেরীতে সংগৃহীত কিতাব মুতালা’আ করতে থাকেন এবং তাঁর কাছ থেকে ২০/২১ খানা কিতাবের ‘সনদ’ লাভ করেন। চৌদ্দ বছরে মাদ্রাসার শিক্ষা সমাপ্ত করে দীর্ঘ ৫/৬ বছর বিভিন্ন কেতাব ‘বিনি’ (গভীর অধ্যয়ন) করতে থাকেন।
মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) মেজ হুযূরকে ‘জমিয়তে ওলামা বাংলা ও আসামের’ মুফতী নিযুক্ত করেন। ১৩৫১ হিজরী ৪ঠা জিলকদ বুধবার কলকাতা থেকে জাহাজে হজ্জে রওনা দেওয়ার প্রক্কালে তিনি ঘোষণা করেন : “আমি ইলমের জাহাজকে (মেজ হযূরকে) দরিয়ায় ভাসিয়ে দিলাম।”
মেজ হুযূর স্বীয় আব্বা, পীর ও মুর্শিদের খেদমতে সুদীর্ঘ ১৪/১৫ বছর তা’লীম গ্রহণ করে খিলাফতপ্রাপ্ত হন। সকাল-সন্ধ্যা মুরাকাবা-মুশাহাদা করা ও লোকদের করানো তার নিত্য নিয়ম ছিল। তাঁর ওযিফা জীবনে বাদ পড়েছে বলে জানা নেই।
তাবাকাতুল-ইজাম (উর্দু), মিন্নাতুল মোগিস (উর্দু), আল মৌজুয়াত (উর্দু), নসিহাতুন্নবী, তাহকিকুল মাসায়েল প্রভৃতি অর্ধ শতাধিক বই-পুস্তকের তিনি প্রণেতা এবং তাঁরই আদেশ ও তত্ত্ববধানে প্রকাশিত হয়।
তিনি ওয়ায-নসিহতে বাংলা-আসামে অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার হাজার হাজার মুরিদের মধ্যে আলেম-ফাজিলের সংখ্যা অনেক। ইন্তেকালের পর তাঁকে ফুরফুরাতেই দাফন করা হয়।
মুজাহিদে মিল্লাত, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের সিদ্দিকী (সেজ হযুর) মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর তৃতীয় সাহেবজাদা। তিনি অনুমান বাংলা ১৩১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকে তীক্ষ্ম মেধাবী ও তেজস্বীরূপে খ্যাত ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি কলকাতার তৎকালীন নামকরা দীনি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা রমজানীয়া (চুনাগলি, বর্তমান মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ পার্শ্ব) থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ফারেগ (উত্তীর্ণ) হন। অতঃপর তিনি মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর খেদমতে থেকে যথারীতে তালীম পেতে থাকেন এবং খিলাফত হাসিল করেন। মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর সাথে সফরে সর্বদা ছায়ার মত থাকতেন। তিনি তেজস্বী আলেম ও বক্তা ছিলেন। রাজনীতিতে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
তিনি জমিয়তে ওলামা বাংলা ও আসামের সেক্রেটারী রূপে কৃতিত্বের ছাপ রেখে গেছেন। পত্র-পত্রিকায় সুন্দর প্রবন্ধ লিখতেন। রাজনৈতিক পটভূমিকায় সমাজে তার মতামতের যথেষ্ঠ গুরুত্ব ছিল। এমনকি জটিল সমস্যা সমাধানে তাঁর মতামতের প্রতি সমাজ তাকিয়ে থাকত। তৎপ্রণীত কিতাবের মধ্যে ওযিফা ও মুরাকাবা, পাক-নাপাকের মাসআলা, বিবি ও শওহরের নসিহত, মহররম কাহিনী, শেরখানীর ফতোয়া প্রভৃতি খ্যাতি অর্জন করে।
হযরত মাওলানা নজমুস্ সায়াদাত সিদ্দিকী (রহ.) হযরত মাওলানা আবূ বকর সিদ্দিকী (রহ.) এর চতুর্থ সাহেবজাদা ছিলেন। তিনি নহুযূর নামে প্রসিদ্ধ। ন-হুযূর বাংলা ১৩১৮ সাল মুতাবিক ইংরেজী ১৯১৩ এবং হিজরী ১৩৩৩ সনের রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন।
ন’হুযূর খানদানী রেওয়ায মুতাবিক গৃহশিক্ষকের কাছে ইবতেদায়ী তা’লীম হাসিল করেন। অতঃপর তিনি কলকাতা মাদ্রাসা আলীয়ায় অধ্যয়ন করেন। প্রখর মেধা ও স্মৃতিধর নহুযূর মাদ্রাসা আলীয়ায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে পড়াশুনা সমাপ্ত করেন। ফারিগ হওয়ার পর তিনি মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর আদেশে ৪/৫ মাস চাকরি (ম্যারেজ রেজিষ্টার) করেন। চাকরি ত্যাগ করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলতেন: কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত আদায় করার উদ্দেশ্যই চাকরি করা। নায়েবী নবীর সার্থক উত্তরাধিকারী নহুযর।
যৌবন বয়সে তিনি ঘোড়-সওয়ার, কুস্তি, লাঠিখেলা প্রভৃতি পছন্দ করতেন। এমন কি তিনি চাষের কাজে অংশ নিয়েছেন। সেলাইয়ের মেশিন কিনে সেলাই করেছেন, সুন্নত নিয়তে খেজুরের পাতার চাটাইতে নিদ্রা গেছেন। প্রসঙ্গত তিনি বলতেন: এ সব করেছি কেবল নবীপাকের সুন্নত নিয়তে, চাটাইতে শুলেই কি সুন্নত আদায় করা হবে? কখনই না। তাহলে তো সাওতালরাও চাটাইয়ে শুয়ে থাকে। বাবা! আমল আর নিয়ত এক হওয়া চাই।
৭ জানুয়ারী ১৯৮২, ১১ রবিউল আওয়াল ১৪০২ হিজরী, ২২ পৌষ ১৩৮৮ সাল বৃহস্পতিবার ২-৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
হযরত মাওলানা আবুল বাসার মুহাম্মদ জুলফিকার আলী সিদ্দিকী (রহ.) মোজাদ্দেদে-জামান (রহ.) এর কনিষ্ঠ সাহেবজাদা। মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর বয়স অনুমান ১৯/২০ বছর। তিনি ছোট হুযূর নামে সমধিক পরিচিত।
ছোট হুযূর বলেন, মিয়া সাহেব মহল্লার (মাদানী মসজিদ) মসজিদে কাটাতাম, ইলম শিখতাম। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পিতা মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) ছোটছেলের জন্য কলিজা নিংড়ানো দোয়া করেন। একসময নিজের জীবনের আগামী দিনের কথা চিন্তা করে মোজাদ্দেদে জামান (রহ.)-এর কদমে খুব কাঁদতে থাকেন। মোজাদ্দেদে জামান তাঁকে সান্তনা দিয়ে দোয়া করে বলেন : বাবা তুমি দরবেশীতে মগ্ন থাকো, আল্লাহ্ তোমার দরজায় পাল্কী বাঁধা রাখবে। অনুমান বাংলা ১৩২৬ মুতাবিক ইংরেজী ১৯২০ সাল এবং হিজরী ১৩৪০ সালে ফুরফুরায় জন্মগ্রহণ করেন।
খারেজীভাবে তিনি দীনি তা’লীম হাসিল করেন এবং স্বীয় ওয়ালেদ সাহেবের কাছে বাতেনি তালীম পান। ছোট হুযূরের যিন্দিগী বস্তুত মোজাদ্দেদে জামান (রহ.) এর দোয়ার বাস্তব ফলস্বরূপ। দাওয়াতে এত ব্যস্ত মানুষ খুব কম দেখা যেত। সারা বছর তিনি দাওয়াতে ওয়ায-মাহফিল করে চলেছেন। এমনকি মোহেব্বীনদের অনুরোধে অধিকাংশ দিন একই দিনে ২/৩ টি স্থানে জলসায় তাকে যোগদান করতে হত। কোন কোন ক্ষেত্রে একই দিনে ৩/৫ স্থানেও তাঁকে উপস্থিত হতে হত। তাঁর জবানের ওয়ায-নসিহত শোনা ও দোয়া পাওয়ার আশায় মানুষ চাতকের মত চেয়ে থাকতো।
আশেকে রাসূল ছোট হুজুর (রহ.)-এর ওয়াযে পাষাণ-হৃদয়ও উদ্বেলিত হয়ে উঠতো। মসজিদ বানানো, কাঁচা মসজিদ পাকা করা, কবরস্থান প্রাচীর দিয়ে ঘিরে হিফাজত করা, মাদ্রাসা ও কুরআনীয়া মক্তব প্রতিষ্ঠা করা তাঁর কর্মময় জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ঠ। মাদ্রাসা মক্তবের জন্য ইসালে সওয়াবে চাঁদা তোলায় তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন, তাকওয়া-পরহেজগারীতে তিনি অনন্য ছিলেন।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে পীর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী রহ. ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকীকে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। তিনি ১৯৩৯ সালে থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বৎসর যাবৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বাংলাদেশে মুসলিমদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সামাজিক অঙ্গনে সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৭৭ সাথে তিনি ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান ।
বাংলার মুসলমানদের বিগত তিন যুগের ইতিহাসের সাথে ফুরফুরার পীর মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকীর নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। পিতা ও পিতামহের রেখে যাওয়া মাদরাসা ও ইসলামী কেন্দ্রগুলির পরিচালনা ও উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন স্থানে তিনি শতাধিক খানকা, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের তত্ত্বাবধানে এবং বিভিন্ন আলিম ও আগ্রহী ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে আরবি, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় তিনি কয়েক শত মৌলিক ইসলামী গবেষণা গ্রন্থ, পুস্তিকা, পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি প্রকাশ করেন। মুসলিম সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকারের শিরক, বিদ’আত,কুসংস্কার, ভুলধারণা, ইসলাম বিরোধী রীতিনীতি ওয়াজ, নসীহত, বক্তব্য, বিবৃতি ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জ সৃষ্টিতে সক্ষম । गा ক্ষুদ্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অনুসারীদের মধ্যে ভালবাসা, সততা, আল্লাহ্- আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার মানসিকতা তৈরির জন্য তিনি চেষ্টা করেন। সর্বোপরি মুসলিম সমাজের আলিম ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে খুঁটিনাটি মতভেদসহ ঐক্য, সংহতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা প্রতিষ্ঠার তিনি আমৃত্যু নিরলস ও নিঃসার্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে সত্য গ্রহণে তাঁর আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা অতুলনীয়। কখনোই তিনি কাউকে কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিকূলে দাড় করাতে পছন্দ করতেন না। বাংলা ও ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পীর হিসেবে নিজেকে বা নিজের পিতা-পিতামহকে সত্যের একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে মনে করতে তিনি কখনোই প্রস্তুত ছিলেন না। বরং কুরআন, সুন্নাহ ও শরীয়তে ইসলামকেই তিনি সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন। বুজুর্গগণের বুজুর্গি, বেলায়াত ও মর্যাদা অবশ্য স্বীকার করতে হবে, তাঁদেরকে ভালবাসতে হবে, কিন্তু তাঁদেরকে নিষ্পাপ বা নির্ভুল মনে করার প্রতিবাদ করতেন তিনি। প্রথম যুগ থেকে সকল বুজুর্গেরই ইজতিহা হতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। এরূপ ইজতিহাদী ভুলের কারণে বুহুর্তের বুজুর্গি কমে না। পাশাপাশি কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে ইজতিহাদী ভুল ধা পড়ার পরেও শুধুমাত্র বুজুর্গের কর্মের অজুহাতে ভুলটি আঁকড়ে ধরে থাকা ব এরূপ অজুহাতে প্রমাণিত সুন্নাতে নববী পরিত্যাগ করাকেও তিনি অপরাধ বলে মনে করতেন। এজন্য তিনি সকল বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে আলোচনা-পর্যালোচনা করতে ভালবাসতেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: বাবা, আমরা পীর সাহেব বলে তো আমা নিষ্পাপ বা নির্ভুল নই। কোনো ভুল-ভ্রান্তি দেখলে অবশ্যই বলবে। আমরা তা সংশোধন করব।
আজীবন তিনি এই নীতির উপর অটল ছিলেন। দীনী আলোচনায় নিজের পছন্দের দিকে খেয়াল করে বা তাঁকে খুশি বা সন্তুষ্ট করার জন্য কেউ কথা বললে তিনি দারুণভাবে অসন্তুষ্ট হতেন; বরং একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য রেখে কুরআন-হাদীসের আলোকে দলিল প্রমাণা আলোচনা করতে তিনি উৎসাহ দিতেন এবং আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনা মাধ্যমে যে বিষয়টি সঠিক বা অগ্রগণ্য বলে প্রতিভাত হতো তাকেই গ্রহণ করবে। উৎসাহ দিতেন।
ইসলামের মূলভিত্তিই তাওহীদ। মহান আল্লাহ্র রুবূবিয়্যাত, উলূহিয়্যাত বা আসমা ও সিফাতে কোনোভাবে কাউকে শরীক করাই সবচেয়ে বড় পাপ ও ক্ষতির মূল। আরবের মুশরিকগণ, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও পূর্ববর্তী নবীগনের অন্যান্য উম্মাতের মধ্যে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে নবী, রাসূল, ওলী, বুজুর্গ, ফিরিশতা, জিন, বুজুর্গদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, দ্রব্য ইত্যাদির প্রতি অতিভক্তির মাধ্যমে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও এভাবে শির্ক প্রবেশ করেছে। নবী-ওলীগণের 1 মুক্তি ও ভালবাসা ঈমানের অংশ। পাশাপাশি ভক্তির নামে তাদেরকে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহ্র কোনো গুণ বা ক্ষমতার অধিকারী মনে করা বা মহান আল্লাহ্র প্রাপ্য ইবাদত বা ভক্তি তাদেরকে প্রদান করা শিরকের মূল কারণ। সকল যুগেই শয়তান চেষ্টা করেছে নবী-ওলীগণের প্রতি অভক্তি ও অবিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করতে। এদিক থেকে ব্যর্থ হলে সে চেষ্টা করেছে বিশ্বাসী ভক্তকে অতিভক্তির মাধ্যমে শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত করতে। পূর্ববর্তী ও পার্শবর্তী ধর্মের প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে এরূপ অনেক শিরক প্রবেশ করে। মুজাদ্দিদে আলফে সানী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী, সাইয়্যেদ আহমদ ব্রেলবী প্রমুখের লিখনিতে আমরা এ সকল শিরকের বিবরণ ও শিরকে লিপ্তদের ‘দলিল’ খন্ডন ও তাওহীদের দাওয়াত দেখতে পাই। তাঁদেরই ধারায় বিশুদ্ধ তাওহীদের প্রচার ও শিরকের উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করেন ফুরফুরার পূর্ববর্তী পীরগণ। আবুল আনসার সিদ্দিকী (রহ.) ছিলেন তাঁদের উত্তরসূরী তাওহীদের এক দুর্দমনীয় অকুতোভয় সিপাহসালার।
সুন্নাতে নববীর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ছিল ফুরফুরার পীর আবুল আনসার সিদ্দিকী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না।
যতক্ষণ না তার পছন্দ-অপছন্দ আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসারী অনুগত হবে।” এ গুণটির পরিপূর্ণ প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তাঁর জীবনে। মাে নববীর বিপরীত কোনো কিছুকেই দাড় করাতে তিনি রাজি ছিলেন না।
সাহাবীগণকে তিনি সুন্নাত অনুধাবনের ও সুন্নাতের ব্যাখ্যার মানলঃ মনে করতেন। তা সত্ত্বেও তিনি সুন্নাতে সাহাবাকে সুস্পষ্ট সুন্নাতে নববীর বিপরীতে দাড় করানো বা সুন্নাতে সাহাবার অনুহাতে সুন্নাতে নববী পরিচা করাকে সঠিক মনে করতেন না। কোনো সাহাবীর কর্ম যা কোনো প্রমাণিত সুন্নাতে নববীর ব্যতিক্রম হয় তবে সাহাবীর কর্মের জন্য যুক্তি, ওজর ও ব্যাখ্যা পেশ করতে হবে, কিন্তু সুন্নাতে নববী পরিত্যাগ করে সাহাবীর কর্মকে গ্রহণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালো খেযাব বা কলপ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। এবং লাল, হলুদ, নীলচে হলুদ ইত্যাদি খেয়ার ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এর বিপরীতে কোনো কোনো সাহাবী কালো খেযাব ব্যবহার করেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সাহাবীর কর্মের ব্যাখ্যা হিসেবে আমরা বলব যে, তিনি হয়তো এ বিষয়ক হাদীস জানতেন না বা বিষয়টি তাঁর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ ছিল বা তাঁর কর্মের অমুক ওজর ছিল। আমরা সম্মানজনক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সাহাবীর মত বা কর্মটি পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কর্মটি গ্রহণ করব। আমরা কখনোই সম্মানজনক ব্যাখ্যার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কর্ম বা সুন্নাত পরিত্যাগ করে সাহাবীর কর্ম গ্রহণ করব না। আমরা বলব না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুক বা তমুক কারণে এ কথাটি বলেছেন, কাজেই তাঁর কথাটি আর দলিল নয়, বরং অমুক বা তমুক যুক্তিতে সাহাবীর কথাটিই আমরা গ্রহণ করব।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত পাওয়া গেলে কি আর কারো সুন্নাত তালাশ বা অনুসরণ করার দরকার আছে?
সাহাবীগণের পরে কোনো বুজর্গকে তিনি সুন্নাত অনুধাবনের একমাত্র মানসও বলে মনে করতেন না। কোনো বুজুগের কর্মের অজুহাতে প্রমাণিত সুন্নাত পরিত্যাগ করতে তিনি রাজি ছিলেন না। বরং সম্মানজনক ব্যাখ্যার মাধ্যমে বুজুর্গের কর্মকে পরিত্যাগ করে সুন্নাতে নববীকে আঁকড়ে ধরতে তিনি সদা সচেষ্ট থাকতেন।
অমুক বুজুগ অমুক বা তমুক কাজ করেছেন, তিনি কি ভুল করতে পারেন, অথবা তিনি কি তাহলে জাহান্নামী, অথবা তিনি কি বেলায়াত পাননি …… ইত্যাদি দিয়ে সুন্নাতে নববীর বিরোধিতা করাকে তিনি অত্যন্ত আপত্তিকর বলে মনে করতেন। কোনো বুজুর্গকে নির্ভুল, নিষ্পাপ বা তাঁর প্রতিটি কর্মকে অনুসরণযোগ্য ইবাদত বলে গণ্য করা এবং এ যুক্তিতে প্রমাণিত সুন্নাত পরিত্যাগ করাকে তিনি নুবুওয়াতের ক্ষেত্রে শিরক বলে উল্লেখ করতেন। বুজুর্গগনের প্রতিটি কর্ম তাঁর বেলায়াতের উৎস নয়। বরং তাঁর সামগ্রিক কর্ম তাঁর বেলায়াতের উৎস। তাঁর সামগ্রিক কর্মের মধ্যে অগণিত ইবাদত সুন্নাতের পাশাপাশি কিছু জায়েয ও সাওয়াবহীন কর্ম থাকতে পারে এবং কিছু ব্যক্তিগত ইজতিহাদ বা ভুল থাকতে পারে। এগুলির কারণে তার বুজুর্গি নষ্ট হয় না বা উক্ত পাওয়ারহীন বা ভুল কর্মের অনুকরণযোগ্যতা প্রমাণিত হয় না। মুসলিম উম্মাহর অগণিত বুজুর্গের মধ্যে কেউ ঈমানের হ্রাসবৃদ্ধি হয় বলে বিশ্বাস করে ওলী হয়েছেন, কেউ ঈমানের হ্রাসবৃদ্ধি হয় না বলে বিশ্বাস করে ওলী হয়েছেন, কেউ সামাকাওয়ালী জায়েয বলে বিশ্বাস করে এবং এরূপ কর্মে অংশগ্রহণ করে ওলী হয়েছেন এবং কেউ এগুলিকে না-জায়েয বলে বিশ্বাস করে ওলী হয়েছেন। কেউ ধূমপান জায়েয বলে বিশ্বাস করে বা ধূমপান করে ওলী হয়েছেন এবং কেউ ধূমপান না-জায়েয বলে বিশ্বাস করে ওলী হয়েছেন। কাজেই কারো কর্মকেই অনুকরণ অনুসরণের একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বরং তাঁদের প্রতি পরিপূর্ণ ভালবাসা ও ভক্তিসহ সুন্নাতে নববীর পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণের জন্য সদা সচেষ্ট থাকাই আমাদের দায়িত্ব ।কেউ যদি বলত, হুজুর আপনি অমুক কাজটি করতে বলছেন, কিন্তু আপনার আব্বা তো করেননি, আপনার দাদা তো করেননি, অমুক বুজুর্গ তো করেননি, তবে তিনি অনেক সময়ই দু’ চোখের পানি ফেলে কাঁদতেন এবং বলতেন, বাবা, আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন জানার পরেও কি আমি তা ছেড়ে দেব?” তিনি সর্বদা বলতেন, “কুরআন-সুন্নাহর বাইরে আমার কোনো নিজস্ব মত নেই ।” তিনি আরো বলতেন, “আমি কাউকে চিনি না, আমি চিনি একমাত্র জনাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে।”
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পূর্ববর্তী সমাজ সংস্কারকগণ ও বুজুর্গগণ সকলেই সুন্নাতের অনুসরণ ও প্রতিষ্ঠার জন্য সদা সচেষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি সমাজের পারিপার্শিকতা, মুসলিমদের অবস্থা ও ব্যক্তিগত ইজতিহাদের আলোকে কিছু খেলাফে সুন্নাত জায়েয কর্ম তারা করেছেন বা করার অনুমতি দিয়েছেন। এগুলি দীনের অংশ নয়, বরং উপকরণ মাত্র। কাজেই সম্ভব হলে এগুলির পরিবর্তে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা উত্তম। এ বিষয়ে তিনি বলেন : “আমি আমার ওয়ালিদ সাহেব রাহিমাহুল্লাহুর ও তাঁর মাধ্যমে আমার দাদাজী রাহিমাহুল্লাহু ও অন্যান্য সকল বুজুর্গ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তার সার সংক্ষেপ হলো কুরআন সুন্নাহর বাইরে কোনো তরীকত-তাসাউফ নেই। ইত্তিবায়ে সুন্নাতের বাইরে কোনে ইবাদত, কামালত বা বুজুর্গী নেই। তরীকত অর্থ শুধুমাত্র কিছু যিকির আযকার বা রিয়াযত নয়। ঈমান, আকীদা, আমল ও রিয়াযাতের সমন্বয় হলো তরীকত। আকীদা, তাকওয়া, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত আমল অপরিবর্তনীয়। কিন্তু রিয়াযাত, মুজাহাদা, উপকরণ বা অবলম্বনের পরিবর্তন ঘটে ও ঘটাতে হয়। যুগে যুগে যত তরীকত সৃষ্টি হয়েছে সবই এই রিয়াযাত ও নফল ওযীফার পরিবর্তন হেতু। কারণ নফল ইবাদত ও রিয়াযাতের পদ্ধতির মধ্যে কিছু রয়েছে জায়েয আর কিছু সুন্নাত। অনেক সময় প্রয়োজনের জন্য তরীকতের আমল বা রিয়াযাতের মধ্যে কিছু জায়েয বিষয় রয়ে যায়। এগুলিকে ক্রমান্বয়ে সুন্নাত ক্ষতিতে উত্তরণ করার চেষ্টা করতে হয় ।… আমি আমার পিতা ও পিতামহের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক আকীদা ও আমলকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। তাদের রেখে যাওয়া দাওয়াত, ইরশাদ ও সংস্কারের কাজ জোরদার করার চেষ্টা করেছি। আর কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিয়াত ও ওযীফার মধ্যে কিছু পরিবর্তন করেছি। তাঁদের শিক্ষার আলোকেই আমাকে এই পরিবর্তন করতে হয়েছে। তারা আমাদের শিখিয়েছেন যে, সুন্নাতের অনুসরণই কামালাতের একমাত্র পথ। তবে কিছু জায়েয বিষয় তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বজায় রেখেছিলেন। আমিও অনেক জায়েয বিষয় বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছি, যদিও সুন্নাতই উত্তম। সাথে সাথে আমি আমার দায়িত্ব ও সাধ্যের মধ্যে কিছু কিছ বিষয়ে জায়েযের পরিবর্তে সুন্নাত পদ্ধতি প্রদানের চেষ্টা করেছি। যেন মুরীদগণ বেশি সাওয়াব অর্জন করতে পারেন এবং তাঁদের জন্য কামালাতের পথ আরো সহজ ও নিশ্চিত হয়।
ফুরফুরার পীর আবুল আনসার সিদ্দিকী (রহ.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর সিদ্দিকী আখলাক। তাঁর কাছে কিছুক্ষণ বসলে মানুষ তাঁর দুশ্চিন্তা ও মনের অস্থিরতা তুলে যেত। সবাইকে তিনি ভালবাসতেন। কারো উপর রাগ হলেও বেশিক্ষণ তা থাকত না। কারো দুর্ব্যবহারে বা বেয়াদবীতে কষ্ট পেলেও তাকে কিছু বলতে পারতেন না। কারো বিরুদ্ধে গীবত-অভিযোগ করা তিনি পছন্দ করতেন না। অতি সাধারণভাবেই জীবনযাপন করেছেন তিনি। বিলাসিতার আগ্রহ কখনোই তাঁকে স্পর্শ করেছে বলে আমরা দেখিনি। অতি সাধারণ কাপড়ের ছেঁড়া ও তালি দেওয়া জামা, লুঙ্গি পরিধান করেছেন সর্বনা। শুতেন একটি ভাঙ্গা তক্তপোষ বা চৌকিতে। তাঁর নিজের ঘরের সব কিছুই পুরাতন মার্কেট থেকে কেনা জোড়া তালি দেওয়া ফার্নিচার। যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন যেন সবকিছু থেকে কিছু টাকা বাচিয়ে দারুস সালাম, পাকশা ও অন্যান্য স্থানের মসজিদ, মাদরাসা ও মারকাজগুলির জন্য কিছু ব্যয় করা যায়।
যে বৈশিষ্ট্যটি তাঁকে সমসাময়িক সবার থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করেছে তা হালা দলমত নির্বিশেষে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে ভালবাসা এবং সকলের কলাপ কামনা করা। তিনি বলতেন, বাবা, বিভিন্ন দরবারের বা দলের অনুসারীদের চিহ্ন থাকে। চুপি, জামা, পাগড়ি, পোশাক ইত্যাদির মধ্যে তাদের বিশেষ কিছু চিহ্ন থাকে, যদ্বারা তাদেরকে চেনা যায় ও বলা যায় যে, এ ব্যক্তি অমুক দল বা দরবারের অনুসারী। বাবারা, আমার অনুসারীদের চিহ্ন হলো যে, তারা নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে ভালবাসে এবং কাউকে হিংসা করবে না।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ আমরা তুলে দিতে পারব বা তুলে দেওয়া আমাদের জন্য জরুরিও নয়। তবে ইখতিলাফ বা মতভেদ কোনোভাবে ইফতিরাক বা দলাদলিতে রূপান্তরিত করা যাবে না। মুমিনের জন্য ইখতিরাফ বা মতভেদ সর্বদা নিন্দনীয় নয়, বরং অনেক সময় তা ভালোও হবে পারে, তবে ইফতিরাক বা বিভক্তি ও দলাদলি সর্বদাই নিন্দনীয় ও কঠিন গোনাহের কাজ। সকল ইখতিলাফসহ মুমিনদের অনুভব করতে হবে যে, আমরা সকলেই একই দলের মানুষ। মাদরাসা ভিন্ন হলেও সকল তালিবে ইলম যেমন ভাই ভাই, তেমনি সকল মতভেদসহ আমরা সকল মুসলিম ভাই ভাই। আমাদের রাব্ব এক, নবী এক, কিভাব এক এবং গন্তব্যও এক। মুসলিমদের বিভক্তি ও দলাদলিই যুগে যুগে উম্মাতের বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হয়েছে। তিনি বলতেন, মুমিন যতক্ষণ কুফুরীতে না পৌঁছায় ততক্ষণ সে আমার ভাই। মুমিনগণের মধ্যে পরস্পরে ভালবাসা যেমন আল্লাহ্র নির্দেশিত ইবাদাত, তেমনি ইবাদত ভালবাসা ও সংহতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
ফুরফুরার পীর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) চেষ্টা করেছেন আলিমগণের মধ্যে বিরাজমান বিভক্তি ও দলাদলি দূর করতে। বিশেষত ‘সুন্নী’ ও ‘ওহাবী’ নামে মুসলিম উম্মাতকে বিভক্ত করার তিনি ঘোর বিরোধিতা করেছেন। ভারতের অনেক আলিম দেওবন্দী আলিমগণকে ওহাবী বলে গণ্য করতেন। বিশেষত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-এর বিরুদ্ধে অনেক ফতওয়াবাজি হয়। আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) বলতেন, ওগো, আমি এবং আশরাফ আলী থানবী একই মতের গো। এছাড়া তিনি সৌদি আরবের বাদশাহের কাছে চিঠি মাজার-কবর ভাঙ্গার বিষয়ে তার কর্ম হাদীসের আলোকে সমর্থনযোগ্য বলে জানান। তাঁর পুত্র ‘আব্দুল হাই সিদ্দিকী প্রায়শ বলতেন: “আহলে হাদীস আহলে হানীফ, আহলে হানীফ আহলে হাদীস, বল নারায়ে তাকবীর।” তিনি আরো বলতেন: “ওগো, আমরা চার ভাই না গো, আমরা পাঁচ ভাই, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী এবং আহলে হাদীসরাও আমাদের ভাই।” এভাবে তাঁরা মাযহাবী, লা-মাযহাবী, ওহাবী, সুন্নী ইত্যাদি ভেদাভেদ দূর করে মতভেদসহ মান্তরিক ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে হযরত আবুল আনসার সিদ্দিকী (রহ.) ঐক্য ও ভালবাসার কথা প্রচার করেছেন আজীবন।
ফুরফুরার পীর আবুল আনসার সিদ্দিকী (রহ.) জীবনের শেষ পর্যন্ত দেশের তালিম ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভালবাসা ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালান। এজন্য তিনি নিজের টাকা-পয়সা খরচ করেছেন, আলিমদের নিকট দাওয়াত নিয়ে গিয়েছেন বা দূত পাঠিয়েছেন, কিন্তু কখনো তিনি ঐক্য প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব গ্রহণের বিন্দুমাত্র আশা করেননি। ঐক্যের মাধ্যমে উম্মাতের কল্যাণ চেয়েছেন। এ প্রচেষ্টায় তিনি কোনভাবে আলিমদেরকে নিজের মত দ্বারা প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেননি। তাঁর আশা ছিল যে, আলিমগণ তাঁদের নিজেদের মতভেদসহই পরস্পরে ভালবাসবেন এবং উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণে প্রয়োজনীয় বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
ব্যক্তিগভাবে আমি পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক আলিম ও বুজুর্গের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি। তাঁর মতো এমন নিরহঙ্কার, আত্মবিমুখ, সুন্নাতের প্রতি সমর্পিত, উম্মাত প্রেমিক মানুষ আমার কাছে বিরল মনে হয়েছে। আমাদের প্রতি তাঁর ইহসান আলোচনা করে শেষ করতে পারব না। মহান আল্লাহ্ তাঁকে আমাদের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ ও সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করুন। তাওহীদ, সুন্নাত, মহব্বত ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর রেখে যাওয়া মিশনের খাদেম হিসেবে আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন।”
ফুরফুরা দরবারের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে ২০০৬ সালের ২২ ডিসেম্বর শায়খ আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
ফুরফুরার মক্তবে শুরু হয় শায়খের শিক্ষাজীবন। পড়াশোনা করেছেন সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সউদ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, আল জামিআতুস সিদ্দিকীয়া দারুল উলুম ফুরফুরায়।
কর্মজীবনে তিনি জমিয়তুল মুসলিমীন হিজবুল্লাহর আমীর হিসেবে ফুরফুরার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়াও আল জামিআতুস সিদ্দিকীয়া দারুল উলুম ফুরফুরার মহাপরিচালক ও শাইখুল হাদীস হিসেবে তিনি খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। শায়খের তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় ১৫ টির অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মালয়শিয়ায় এপর্যন্ত প্রায় ৪০০০ এর অধিক মাহফিল, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে তিনি অংশ নিয়েছেন।
মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ ইসলামের শ্বাশ্বত বাণী পৌঁছে দেবার নিরলস খেদমত করে চলেছেন তিনি।
মাসিক মাহফিল
ঢাকা দারুসসালাম: প্রতি ইংরেজি মাসের ২য় জুমাবার, বাদ মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত।
পাবনা পাকশী: প্রতি ইংরেজি মাসের শেষ জুমাবার, বাদ মাগরিব থেকে এশা।