আমাদের সম্পর্কে

পরিচিতি

ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ফুরফুরা দরবারের প্রতিষ্ঠা করেন মুজাদ্দেদে জামান পীর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী রহ. ১৮৯৬ সালে। কবর পূজা, মাজার পূজা, পীর পূজা, কুসংস্কার, শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাংলা ভারতে দাওয়াতী কার্যক্রমে তাওহীদ ও সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রপুরুষ ছিলেন তিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিকী রা. এর বংশধর তিনি। তাঁর এই দাওয়াতী সিলসিলা বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্ম গদ্দিনশীন পীর শায়খ আব্দুল হাই সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহর হাত ধরে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির ফুরফুরা থেকে ভারতীয় অংশ এবং  ঢাকা দারুসসালামে অবস্থিত ফুরফুরার কায়েম মোকাম মার্কাজে ইশাআতে ইসলাম থেকে বাংলাদেশ অংশের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। গদ্দিনশীন পীর সাহেব হিসেবে শায়খের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দুই বাংলা ও আসামে চলছে দরবারের সামগ্রিক কার্যক্রম।

ফুরফুরা দরবার মানুষের আত্নশুদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহর অনুসরণে সালফে সালেহীনদের দেখানো পথে তার নিরন্তর খেদমত জারি রেখেছে। আত্নিক উন্নতি ও বান্দাকে আল্লাহমুখী করতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। শিরক ও বিদআতের বিসর্জন এবং ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তাওহীদ ও সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ফুরফুরা দরবারের অন্যতম লক্ষ্য। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা লালন করে, মুজাদ্দেদে জামানের উসূলের উপর ভিত্তি করে ফুরফুরা তার সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ফুরফুরা দরবার বিশ্বাস করে ও এই কর্মপন্থা অবলম্বন করে,  মানুষকে আল্লাহর হতে বলে। ফুরফুরার মত কুরআন সুন্নাহ। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে ফুরফুরার কোন মত নেই। মানুষকে আত্নশুদ্ধির জন্য বাইআত মুরীদ করানো হয় এই নিয়তে যে, আল্লাহর বান্দা আল্লাহর আইন মেনে চলার জন্য আল্লাহর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে। উম্মাহর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি না করে মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত ও শরীয়তের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির পরিবর্তে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নীতি অনুসরণ করে ফুরফুরা দরবার। এরই ধারাবাহিকতায় দাওয়াহ, মানবসেবা ও শিক্ষা এই তিনক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে দরবারে ফুরফুরা।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১. বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদার প্রসার

২. সুন্নাহর প্রতিষ্ঠা

৩. আত্নশুদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ

৪. সামগ্রিক সমাজ সংস্কার

৫. ইসলামী শিক্ষার প্রসার

৬. দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলিমের মধ্যে মহব্বত, ঐক্য ও সংহতির সেতুবন্ধন।

ফুরফুরার উসুল বা মূলনীতি

 

ফুরফুরার পীর মুজাদ্দেদ জামান রহ. এর ওসীয়তনামাই ফুরফুরার উসূল।

১. বর্তমান সময়ে ঈমান বাঁচাইয়া রাখা খুব সঙ্কটাপন্ন হইয়া উঠিতেছে। আশরাফুল মাখলুকাত খাতেমুন্নাবিয়ীন হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম শেষ নবী ও তাঁহার পর আর নবী হইবে না। ইহার ওপর ঈমান কায়েম রাখিবেন।

কালেমায়ে তৈয়াবা

لا إله إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কেহই মাবুদ নাই, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল।

কালেমায়ে শাহাদাত

أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু

আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অ-রাসূলুহ।”

অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিতেছি আল্লাহ্ ব্যতীত কেহই মাবুদ নাই, তিনি অদ্বিতীয় অংশীবিহীন, আর আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। ইহার ওপর ঈমান কায়েম রাখিবেন। ইহার বিপরীত কোন কিছুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করিবেন না। যদি কেহ উক্ত কালেমাসমূহ পরিবর্তন করে, সে বেঈমান ও কাফের হইয়া যাইবে।

২. জীবিত কি মৃত পীরের ছুরাত হাজের নাজের জানিয়া ধেয়ান করা হারাম, যারা করে তাহারা বে-ঈমান ।

৩. পুত্র কন্যাদিগকে দীনি এলেম শিক্ষা দিবেন, তৎ সাথে সাথে দুনিয়ার যাবতীয় বৈধ হুনুর হেকমত (শিল্প) ও ভাষা, ইংরেজি, বাঙ্গলা ইত্যাদি শিক্ষা দিবেন ও যাহাতে সর্বসাধারণে শিক্ষিত হইতে পারে তজ্জন্য ইসলামিক কলেজ, ইসলামিয়া মাদ্রাসা, জুনিয়র ও সিনিয়র মাদ্রাসা মক্তব ইত্যাদি ও মধ্যে মধ্যে দুই একটি হাদীস তফছিরের দাওরা খুলিয়া হাদীস তফছির পড়ার সুব্যবস্থা করিয়া দিবেন।

৪. স্ত্রী, কন্যা, মা, ভগ্নীদিগকে পর্দায় রাখিবেন। কন্যাদিগকে শিক্ষাদান কালেও পর্দায় রাখিয়া স্ত্রী-শিক্ষয়িত্রী বা মহরম ব্যক্তি দ্বারা শিক্ষা দিবেন। যারা স্ত্রী, কন্যা, মা ও ভগ্নীকে বেপর্দায় রাখিবে, তাহারা দাইয়ুছ হইয়া জাহান্নামে যাইবে। পর্দা করা ফরজে আয়েন। ইহার প্রতি যাহারা ঘৃণা করিবে, তাহারা বে- ঈমান। উহাদের মতের ওপর ধিক্কার দিবে

৫. আমার মতে যাবতীয় চাকুরির উপযুক্ত বিদ্যা শিক্ষা করায় বাধা নাই। যে চাকুরি শরিয়ত অনুযায়ী জায়েজ, তাহা করিবে, কিন্তু হালাল উপার্জন ও সুন্নত মোতাবেক পোষাক ইত্যাদি ও রোজা নামাজ ঈমান ঠিক রাখিয়া করিবে।

৬. সুদ খাওয়া হারাম, কম হউক কি বেশি হউক বিশেষ ওজর ব্যতীত সুদ দেওয়াও হারাম। সুদ দেওয়া ও সুদ খাওয়া একই প্রকার গুনাহ। সুদে টাকা আনিয়া কারবারও করিতে নাই। সুদখোরের দাওয়াত খাওয়া, তাহার দান খয়রাত গ্রহণ করা হারাম। যে সুদের মাল খাবে, তাহার কলব (অন্তর) অন্ধকার হইয়া যাইবে। সে জেকরের আস্বাদ পাইবে না।
সুদখোর তওবা করিলেও তাহার বাড়িতে বৎসরকাল মধ্যে খাইতে নাই যদি কোন সুদখোর তওবা করিয়া সুদের (সমস্ত) মাল ফেরৎ দেয়, তবে তাহার বাড়িতে তৎক্ষণাত খাইতে পারে। আর তওবা করিয়া সুদ ফেরৎ না দিলে তাহাকে বৎসর কাল পর্যন্ত দেখিতে হইবে, সে সুদ হইতে পরহেজ করে কি না। যদি সুদ আর না খায় ও তাহার মাল অর্ধেকের বেশি হালাল থাকে, এক্ষেত্রে যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, হালাল মাল দ্বারা খাওয়াবে, তবে তাহার দাওয়াতে খাওয়া জায়েজ হইবে।

সুদখোরের পৌনে ষোল আনা হালাল মাল থাকিলেও তওবা করিয়া এস্তেকামত না করা পর্যন্ত তাহার বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া জায়েজ নহে, যেহেতু সেও ফাছেকে মোলেন (প্রকাশ্য ফাছেক)। সুদখোরকে তওবা করান মাত্রই তাহার বাড়িতে খাইলে ও খয়রাত নিলে, হেদায়েত হওয়া দূরের কথা, বরং সুদখোর আরও শক্ত সুদখোর হইবে। অতএব, যদি কেহ সুদ খায়, কিংবা সুদখোরের দাওয়াত খায় ও খয়রাত লয়, সে যেন আমার মুরিদ বা খলিফা বলিয়া পরিচয় না দেয়। তাহার নিকট কেহ মুরিদ হইবেন না।

৭. মেয়ের সাচকের (পণের) টাকা খাইবে না। যে ব্যক্তি খাইবে ও তদ্বারা জেয়াফত করবে, তা হারাম। এই জেয়াফত যারা খাইবে তাহাদের হারাম খাওয়ার গোনাহ হইবে। আমার খলিফাদের মধ্যে যদি কেহ সুদখোরের বাড়ি কিংবা মেয়ের পণ্যের (সাচকের) টাকা দ্বারা জেয়াতকারী ও গ্রহণকারীর বাড়িতে খাবে, তাহার নিকট কেহ মুরিদ হইবেন না। এইরূপ ব্যক্তি আমার খলিফা হোক অথবা অন্যান্য পীরের খলিফা হোক তাহাদের নিকট মুরিদ হইবেন না।

৮. ভাই ভগ্নী ও অংশীদারগণের অংশ ফারায়েজ অনুযায়ী ভাগ করিয়া দিবে। যদি তাহাদেরকে দেওয়া অসম্ভব হয়, তবে এর মূল্য দিয়া হোক, বা যে কোন প্রকারের হোক সন্তুষ্ট করিয়া দাবী ছাড়াইয়া নিবে। নচেৎ খোদার নিকট দায়ী থাকবে। টাকার হোক, কথার হোক, দাবীদারের নিকট মাফ নিবে। যদি দাবীদার মৃত্যু প্রাপ্ত হইয়া থাকে, তবে টাকা পয়সা তাহার ওয়ারিশগণকে দিবে । কথা ইত্যাদির মাফের জন্য নামাজ পড়িয়া সেই মৃতের রূহের ওপর সওয়াব রেখানি করিবে। আর খোদার নিকট ক্ষমা চাইবে। প্রথম বিবাহ ও দ্বিতীয় বিবাহের পুত্র কন্যাদের অংশের মধ্যে ফারায়েজ অপেক্ষা কম বেশি করিয়া দিলে খোদার নিকট দায়ী থাকিবে।

৯. আমি যে কাদরীয়া, চিশতিয়া, নকসবন্দীয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরিকা সম্বন্ধে ছবক ও তালিম নিয়া থাকি ও দিয়াছি, সেই মোতাবেক সকলে কায়েম থাকিবেন। উহা হযরত পীরানে পীর শাহ আব্দুল কাদের জিলানী ছাহেবের ও মাওলানা শাহ অলিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবী (রহ.)-এর কেতাব অনুযায়ী করিয়াছি। এতদ্ব্যতীত মাওলানা শাহ কারামত আলী মরহুম মগফুর ছাহেবের মা’রেফাতের কেতাবগুলি সকলে সর্বদা দেখিতে থাকিবেন। তিনি আমার দাদা পীর হযরত মাওলানা শাহ নুর মুহাম্মদ মরহুম মগফুর ছাহোরের পীর ভাই ছিলেন। অতএব আমরা এক তরিকাভূক্ত।

১০. আমার খলিফা ও মুরিদের মধ্যে যদি কেহ কুরআন হাদীস ও ফেকহসমূহের বিপরীত অর্থাৎ শরিয়তের বিপরীত কোন মত প্রকাশ করে তবে তাহা কেহ মানিবেন না। যদি কেহ আমার খলিফা ও মুরিদ দাবী করিয়া আমার ওসিয়তের বিপরীত চলে, তবে কেহ তাহাকে আমার মুরিদ বা খলিফা মনে করিবেন না ও তাহার নিকট মুরিদ হইবেন না।

১১. হিন্দুর পূজা পার্বনে, মেলা তিহারে ও গান বাজনার স্থানে সাহায্য করিবেন না ও ইহাতে যাইবেন না। পূজায় পাঠা, কলা, ইক্ষু, দুধ ইত্যাদি বিক্রয় করিবেন না। ভেট দিবেন না, দিলে গোনাহে কবিরা হইবে।

১২. কেহ প্রকাশ্য ফাছেকের দাওয়াত কবুল করিবেন না এবং তাহাকে দাওয়াত করিয়া খাওয়াইবেন না। যথা- বেনামাজি, কেননা প্রত্যহ বেতরের নামাজে পড়া হয় “ও নাতরুকু মাই ইয়াফ জুরুকা’ অর্থাৎ আমরা ফাছেক ফাজেরের সাথে চলিব না।

১৩. কেহ দাড়ি মুন্ডন করিবেন না, এক মুষ্টির কম হয় এমন খাট করিবেন না, লম্বা মোছ রাখিবেন না। ফ্রান্স কাট, টেরি বা ঢাকাইয়া ছাট ছাটিবেন না। কাছা দিয়ে কাপড় পরিবেন না। কোর্ট, প্যান্ট, ন্যাকটাই ইত্যাদি বিজাতীয় পোষাক ব্যবহার করিবেন না। সুন্নাত মোতাবেক পোষাক লইবেন ও খালি মাথায় চলিবেন না। টুপি, পাগড়ী, মুসা, পায়জামা ও লম্বা কোরতা ব্যবহার করিবেন। আচকান চোগা ইত্যাদি মোবাহ পোষাক ব্যবহার করাও জায়েজ।

বড়ই পরিতাপের বিষয়, নাছারা, হিন্দু ও অন্যান্য গায়ের কওম তাহাদের জাতীয় পোষাক পরিচ্ছদ ত্যাগ করে না। আর আমাদের কওমের কতক লোক বর্তমানে যাত্রার সংসাজিতে লজ্জা বোধ করে না। কখনও দাড়ি মুন্ডন করিয়া, হ্যাট পৰিয়া, খালি মাথায় কাছা দিয়া রাস্তায় বেড়ায়, কখনও টুপি মাথায় দিয়া লুঙ্গি পরিয়া থাকে। আমি দোয়া করি, আল্লাহ্ আমার মোছলমান ভাইদের ঈমান। কায়েম রাখেন ও শরিয়তের খেলাফ পোষাক হইতে রক্ষা করেন।

১৪. তাস্, পাসা, ফুটবল, ব্যাটবল ইত্যাদি, ঘোড়দৌড়, মহিষ ও গরুর লড়াই বা কোন প্রাণীর লড়াই খেলার নিয়তে দিবে না ও করিবে না। যদি কোথাও ঐরূপ লড়াই হয় তথায় যাইবে না, এটা হারাম।

আত্মরক্ষার জন্য ঘোড়দৌড়, লাঠি খেলা শিক্ষা, তলোয়ার ভাজা, শিক্ষা মাসের মধ্যে ২/৩ দিন তালিমের জন্য করা জায়েজ হইবে, কিন্তু হাটুর নিচে পর্যন্ত পায়জামা পরিবে, নামাজের ওয়াক্তে নামাজ পড়িবে। ঐ শিক্ষা কালে বাজী ও বাজনা না রাখিয়া শিক্ষা করা জায়েজ আছে, কিন্তু ঈদ, বকরা ঈদ, শবে-বরাত, মহররম ইত্যাদিতে না করে। করিলে এবাদতের ক্ষতি হইবে। ১৫. বিবাহে বারুপ পোড়ান, লাঠি খেলা, কলের গান, সুর দিয়া পুথি পড়া তীরন্দাজী ইত্যাদি কার্য্য করিবে না। ফজুলভাবে অর্থ ব্যয় করিবে না এটা হারাম ।

১৬. যথা শক্তি ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি-শিল্প ইত্যাদি অবলম্বন করিয়া হালাল উপার্জন করিবে। খয়রাত গ্রহণ করার ওপর নির্ভর করিবে না। শক্তি থাকা সত্ত্বেও অন্যের নিকট খয়রাত চাহিয়া লওয়া হারাম। আলেমের এলম পীরের পীরত্ব যেন খয়রাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। আলেম ও পীরগণ আল্লাহর ওয়াস্তে ওয়াজ নছিহত করিবেন। কাহারো নিকট ইশারা বা ইঙ্গিত অথবা অন্যের সাহায্যে খয়রাত আদায় করিবে না, উহাও হারাম। যদি কেহ ইচ্ছা করিয়া দেন, তবে তাহা লওয়া জায়েজ আছে।

১৭. আলেম ছাহেবদের নিকট আমার বিনীত আরজ এই যে, আপনাদের মধ্যে যদি কোন মছলা লইয়া এখতেলাফ বা মতভেদ হয়, তবে একত্রে বসিয়া কেতাবসমূহ লইয়া মতভেদ মীমাংসা করিয়া সর্বসাধারণের নিকট ছহিহ মত প্রকাশ করিবেন। যাবত পর্যন্ত ঐরূপ আলেম ছাহেবদের একতা না হইবে, তারত পর্যন্ত আলেম সমাজে দলাদলি থাকিলে অচিরে সমাজ বিনষ্ট হইবার আশঙ্কা আছে।

১৮. যদি কোন আলেমের মত কোনরূপ কেতাবের খেলাফ বিজ্ঞাপণে বা বাজে লোকের মুখে দেখিতে ও শুনিতে পান, তবে যতক্ষণ নিজে তাহার লিখিত মত বলিয়া কিংবা তাহার মৌখিক কথা বলিয়া নিশ্চিতরূপে জানিতে না পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাহার ওপর কোন প্রকার এস্তেহার ও ফতোয়া প্রকাশ করিবেন না। অনেক স্থানে অনেকে বাজে লোকের কথায় বিশ্বাস করিয়া বহু সংখ্যক ঈমানদার মোছলমানদিগের ঈমান বিনষ্ট করিয়া মহা গোনাহগার হইয়াছে ও হইতেছে। আলেম ও পীর ছাহেবগণ সাবধান থাকিবেন। শয়তান জীবিত আছে। সে পীরে পীরে ও আলেমে আলেমে বিবাদ ও দলাদলি লাগাইয়া ইসলামকে বিনষ্ট করিতে চেষ্টা করে। আল্লাহ পানা দেন।

১৯. কেহ গান বাজনা করিবেন না ও শুনিবেন না। আল্লাহ ও রাসূলের তারিফে কবিতা গজল পড়িতে পারেন। কিন্তু এলমে অরুজির ওজনে পড়িবেন, এলমে মুছিকির ওজনে অর্থাৎ রাগ রাগিনী সহকারে পড়া হারাম। এলমে- অরুজির সাথে পড়িতে হইলেও ৫টি শর্ত পালন করিতে হইবে, যথা- মেয়ে লোক মজলিসে না থাকে ।

২০. বর্তমানে যে বাজে লোক মছনবী শরীফ এলমে মুছিকির ওজনে অর্থাৎ রাগ-রাগিণী সহকারে পড়িয়া থাকে। এটা জায়েজ নাই, তথায় যাইবে না। যদি কেহ তথায় গিয়া থাকে, তবে তথা হইতে উঠিয়া যাইবে। মছনবী শরীফ এলমে-অরুজীর সাথে অর্থাৎ বিনা রাগ-রাগিণীতে মিষ্ট স্বরে পড়িতে বাধা নাই।

২১. মাথায় এরূপ লম্বা চুল রাখিবে না যে তা মেয়েলোকের ন্যায় হয়। বাবরী সুন্নত মোতাবেক রাখিতে পারে। বাজে নাদান ফকিরেরা লম্বা চুল রাখে, এইটা হারাম। বাবরী রাখিতে হইলে স্কন্ধ পর্যন্ত চুল কাটিয়া খাট রাখিবে, যাহাতে মহাড়ার নিচে না পড়ে। মহাড়ার নিচে চুল লম্বা হইলে স্ত্রীলোকের ন্যায় হয়। উহা হারাম। উহার প্রতি খোদাতায়ালার লা’নত পতিত হইবে।

২২. সওয়াব রেছানি করিয়া কেহ সওয়াল করিয়া কিছু লইবে না, উহা হারাম। যদি কেহ আল্লাহর ওয়াস্তে মৃতের খতম পড়ে, আর পড়ানে ওয়ালা লিল্লাহ কিছু দেয়, এক্ষেত্রে লওয়া, দেওয়া জায়েজ আছে। বর্তমান জামানায় কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ শিক্ষা দিয়া, আজান দিয়া ও ইমামতি করিয়া, ঝাঁড়ফুক দিয়া মজুরি লওয়া জায়েজ আছে।

২৩. ওয়াজ নছিহত আল্লাহর ওয়াস্তে করিবে। কিছু লিল্লাহ দিলে লওয়া জায়েজ আছে। বাজে স্থানের লোকেরা ভালমন্দ সুদখোর ইত্যাদির চাঁদা জমা করিয়া ওয়াজকারিদিগকে দেয়, উহা নাজায়েজ। হালাল মাল দিয়া দিলে লইতে কোন দোষ নাই ।

২৪. যে যেই স্থানে থাকেন, জামায়াতে নামাজ পড়িবেন। জুমা ও ঈদ পড়িবেন। মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ ব্যতীত সকল স্থানে আখেরে যোহরের নামাজ পড়িবেন। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তিন জুমা তরক করিবে, সে ব্যক্তি মালাউন ।

[বর্তমানে আমাদের দেশের সকল মসজিদেই জুমু’আ সহীহ হবার শর্তসমূহ পূর্ণ হয়। বিধায় এখন আর আখেরে যোহর নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই। জুমু’আ পড়ে আবার আখেরে যোহর পড়লে তো জুমু’আর নামাজটাই সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। – সংকলক]

২৫. অনেকস্থানে দেখা যায়, পীরের ছেলে কিছু জানুক বা নাজানুক পীর সাজিয়া বসে ও মুরিদ করিতে থাকে। অন্য কোন ভাল পীরের নিকট সাধারণকে যাইতে নিষেধ করে। আমার ভয় হয় আমার মৃত্যুর পর আমার পুত্রদের মধ্যে এইরূপ হইয়া পড়ে নাকি। অভাব আমার পুত্রদের মধ্যে যাহারা শরিয়ত মোতাবেক আমল করিবে ও চলিবে এবং তালিম ও শিক্ষা দিবে, তাহাদের অনুসরণ করিবেন।

২৬. আমার বাড়িতে বৎসরের ২১/২২/২৩ ফাল্গুন তারিখ নির্ধারণ করিয়া একটি ওয়াজের মজলিস করি। ঐ তারিখে আমার পীর কিম্বা দাদা পীরের মৃত্যু হয় নাই। আমি জানি, আল্লাহ বলিয়াছেন,

يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
ইয়া আই-উহাল্লাযিনা আমানু কৃ আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম নারান।

“হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদিগকে ও নিজেদের পরিজনকে অগ্নি হইতে রক্ষা কর।” এই আয়াতের মর্ম অবলম্বনে, আমার বাড়িতে দেশী-বিদেশী সকলকে আম দাওয়াত দিয়া, বহু আলেম ওলামা, হাফেজ, কারী কর্তৃক ওয়াজ নছিহত করাইয়া ও নিজে করিয়া শরিয়তের হুকুম আহকাম জানাইয়া দেই। যদি কোন দেশে কোন মছলা নিয়া মতভেদ থাকে, তবে এই মাহফিলে থাকিয়া তাহার মীমাংসা করিয়া নেন।

এই মাহফিলে প্রায় প্রত্যহ ২৫/৩০ হাজার লোক হাজের থাকে। ঐ তিন দিনের এক দিন ৬০-৭০ তম কোরআন শরীফ, ছুরা এখলাছ, ফাতেহা, কলেমা ইত্যাদি পড়ান হয়। এই সমস্তের সওয়াব হযরত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ও যাবতীয় অলি আউলিয়া, গওছ, কুতুব ও যাবতীয় মোছলমানের রূহের ওপর সওয়াব রেছানি করা হয়। এই জন্য এই মাহফিলের এক নাম ইসালে সওয়াব। যদি কেহ এই মাহফিলকে (প্রচলিত) ওরোছ বা অন্য কিছু বলে, তবে তাহা কেহ শুনিবেন না।

এই মাহফিল যাহাতে আল্লাহ্ কায়েম রাখেন, তাহার চেষ্টা আমার পুত্রগণ, খলিফাগণ ও মুরিদগণ করিবেন। খলিফাগণের মধ্যে যদি কাহারো বাড়িতে এইরূপ মাহফিল করিতে কাহারও শক্তি হয়, তবে তিনি তাহা করিবেন। সাবধান! কেহ যেন অর্থের লোভ বা অন্য কোনরূপ মান মর্যাদার জন্য না। করেন। বিশুদ্ধ হেদায়েতের নিয়তে করিলে বহু নেকী পাইবেন। আরও সাবধান থাকিবেন যে, যেন এই মাহফিলে কোন প্রকার বেদয়াত ও হারাম কার্য বা নামাজের জামায়াত তরক না হয়। বাজে তামাসা ইত্যাদি না হয়। যদি কেহ উহা করে, তবে আমি তাহার প্রতি দাবী রাখিব।

২৭. বাজে পীরের দরবারে অমাবশ্যা পূর্ণিমা বা পীরের মৃত্যুর তারিখ নির্দিষ্ট করিয়া ‘ওরছ’ ইত্যাদি হইয়া থাকে। এমন কি জামায়াতে নামাজ পড়া হয় না, তথায় মেয়ে লোক যায়, তাহারা হালকা করে ও বেপর্দা চলে, ইহা হারাম। ঐরূপ মজলিশে কেহ যাইবেন না, যেরূপ সুরেশ্বর, মাইজভান্ডার ইত্যাদি স্থানে আছে। ঐ ভাবের ‘ওরছ করা বেদয়াত ও হারাম।

২৮ . এমন জলি জেকের করিবে না যাহাতে নিদ্রিত ব্যক্তির নিদ্রা ভঙ্গ হয়, কোরআন শরীফ ও নামাজ পড়ায় বিঘ্ন ঘটে।

২৯. ‘জোয়াল্লিন’ ও ‘দোয়াল্লিন’ সম্বন্ধে যে স্থানে স্থানে মতভেদ আছে, তৎসম্বন্ধে আমার মত এই যে, মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফের মোহাক্কেক আলেমগণ যেরূপ দোয়াল্লিন পড়ে, আমিও তদ্রূপ পড়ি। দাল, জাল দ্বারা পড়িলে, নামাজে ফতুরি আসিবে, কিন্তু যে ব্যক্তির চেষ্টা করা সত্ত্বেও মাকরাজ আদায় না হয়, তাহার জন্য মাফ।

৩০. কেহ জমি কট রাখিবে না। জায়সুদী ইত্যাদি দ্বারা কেহ সুদ খাইবে না ও জুলুম করিবে না।

৩১. নিজের হাতে নাড়ি কাটাতে শরিয়তে কোন বাধা নাই। ইহা হযরত আদম (আ.)-এর সুন্নাত হইতেছে। এই নাড়ী কাটাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল করিলে হযরত আদম (আ.) কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়। ইহাতে ঈমান যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

৩২. কেহ আপনাকে মারফতি ফকির মনে করিয়া গরুর গোস্ত, মৎস ও কোন হালাল প্রাণী জবেহ করা ও খাওয়া নিষেধ করে। ইহা কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের খেলাফ। যারা হালাল প্রাণী জবেহ করিতে ও খাইতে ঘৃণা করে, তাহারা কোরআন শরীফের বিপরীত কার্যকারী, কাজেই তাহারা বেঈমান।

৩৩. হানাফী, মালিকি, হাম্বলী ও শাফিয়ী এই চারি মাজহাবের কোন মাজহাব এহানাত করিবেন না। আমি হানাফী, আমার মুরিদগণও হানাফী। শিয়া, রাফেজী, খারিজি ইত্যাদিগের আকিদা বাতিল ও হারাম ।
চার মাজহাব নহে, চারের মাজহাব, চারের মাজহাবই হাদীস কোরআন ও ফেকাহ শরীফ হইতেছে। ফেকাহ শরীফ, কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অনুবাদ (তরজমা) মাত্র। যাহা কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে নাই, তাহারই খোলাছা (মূলমর্ম) ফেকাহ হইতেছে। অতএব এই চারের মাজহাবকে যে এহানত (অবজ্ঞা করিবে, সে কাফের হইবে, কেননা ইহাতে কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফকে অবজ্ঞা করা হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জামানা হইতে আজ পর্যন্ত সকলেই আহলে হাদীস ওয়ালা কোরআন হইতেছে। যে আহলে হাদীস ওয়াল কোরআন হইবে, তাহার আমল চারের কোন এক মাজহাবের সাথে মিলিবে।

৩৪. মিলাদ শরীফে কেয়াম করা মোস্তাহছান। যদি কেহ মিলাদ শরীফ পাঠকালে কেয়াম করে, তবে কেহ তাহাকে জবরদস্তি করিয়া বসাইবেন না। যদি কেহ বসিয়া তাওল্লাদ শরীফ পড়ে, তবে তাহাকেও কেহ জোর করিয়া উঠাবেন না। সামান্য মোস্তাহছান বিষয় নিয়া কেহ দলাদলি করিয়া বিভক্ত হইবেন না। কেয়াম করা আমি ভালই মনে করি। কেয়ামের সময় কেহবা বসিয়া থাকে। কেহবা দাঁড়ায়, এটা ভাল নহে। তৎপ্রতি খেয়াল রাখবেন। কিন্তু কেয়াম মোজাহান সুন্নতে উম্মত। সুন্নাত তিন প্রকার: ১. সুন্নাতে নববী ২. সুন্নাতে সাহাবা, ৩. সুন্নাতে উম্মত ।

(বিদআতযুক্ত পরিবেশে নবীজীর জলোচনার মধ্য দিয়ে যে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়, তা নিন্দনীয় নয়। বরং জায়েজ ও পছন্দনীয়। মিলাদ নিয়ে কারো মুসলমানিত্ব যাচাই করা যায় না। হাজার বছর ধরে যদি মিলাদ পড়ানো হয়, তবুও তা একটা সুন্নাতের সমকক্ষ হবে না। মিলাদ নিয়ে গড়া-ফ্যাসাদ, দলাদলি ও বিভেদ সৃষ্টি করা [ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিজন, চার মাযহাবের ইমাম, প্রসিদ্ধ চার তরিকার ইমামদের থেকে প্রচলিত কিয়ামের কোনো প্রমাণ পাওয়া – – সংকলক)

৩৫. এলমে গায়েব আল্লাহতায়ালা হযরত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যতদূর জানাইয়া দিয়াছেন, ততদূর জানেন। গায়েবের মালিক আল্লাহতায়ালা এইরূপ আকিদা রাখবেন। হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে গায়েব জানেন, সে গায়েবকে এলমে হটুলি বলে।

৩৬, দাড়ি রাখা, লম্বা কোরতা পরা ইত্যাদি সুন্নাত লেবাছকে যারা অবজ্ঞা করিবে, তাহারা বেঈমান হইবে, যেহেতু হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা হয়। হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে অবজ্ঞা করে, সে কাফের হইবে।

৩৭. কামেল পীরের নিকট মুরিদ হইলে, পীর যদি মারা যায়, বেশরা হয় বা দূর দেশবাসী হয়, আর তাঁহার নিকট যাইতে অক্ষম হয়, তবে কামেল পীর দেখিয়া মুরিদ হইয়া তা’লিম পাইতে পারিবে, কিন্তু ভাল পীর থাকা সত্ত্বেও পীরকে অগ্রাহ্য ও অবজ্ঞা করিয়া অন্য পীর ধরিলে ঈমান যাইবার আশঙ্কা আছে।

৩৮. আমার মুরিদ ও মো তাকেদদিগকে ও সকল মোছলমানকে বলিতেছি, যদি কোন ব্যক্তি শরিয়ত মোতাবেক আলেম কিংবা কামেল হয়, তবে তাঁহার ওয়াজ শুনিবেন, খাতেরদারী করিবেন, তাহাতে আমার কোন নিষেধ নাই । যদি কোন আলেম বা ওয়ায়েজ, ওয়াজের মধ্যে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রশংসা উপলক্ষে মছনবীয়ে রুমী ইত্যাদি এলমে মুছিকির ওজনে, অর্থাৎ রাগ রাগিনীসহ পড়ে, তবে তাহার কর্তব্য এই যে, তথা হইতে উঠিয়া আসে।

৩৯. আমি আলেম ও শিক্ষিত লোকদিগকে মহব্বত ও তাজিম করিয়া থাকি। আপনারাও তাজিম ও মহব্বত করিবেন। যে আলেম ও সাধারণ লোক শরিয়ত মোতাবেক চলেন, তাহাদেরকে কেহ তুচ্ছ জানিবেন না। তুচ্ছ জানিলে
আল্লাহতায়ালা ও হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারাজ হইবেন, যেহেতু আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিছ।

৪০. সকলে কুলুখ ব্যবহার করিবেন, স্ত্রী, কন্যা ও পরিজনদিগকে কুলুখ ইত্যাদি আমল করাইতে চেষ্টা করিবেন, যেহেতু কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নাতে মোয়াকাদ্দাহ।

৪১. মাদ্রাসার তালেবুল এলমদিগকে যথা শক্তি জায়গীর রাখিবেন ও সাহায্য করিবেন, কিন্তু দাড়ি মুক্তনকারী, এলবাট রাখা ও হুক্কা বিড়ি খোর তালেবুল-এলম রাখিবেন না। পরহেজগার নামাজী তালেবুল-এলম রাখিবেন। শিক্ষকদিগেরও পরহেজগারি অবলম্বন করিতে হইবে। মাদ্রাছা, স্কুল ও মক্তবে বদকার শিক্ষক রাখিতে নাই ।

৪২. আমার খলিফা ও মুরিদগণের মধ্যে হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও কারী আছেন। তাহারা আমার আদেশে বহু কেতার ছাপাইয়াছেন ও ছাপিতেছেন। আমি সকলের কেতাব সম্পূর্ণ দেখিতে পারি নাই। কাজেই যদি কাহারও কেতাবে শরিয়তের কোন খেলাফ মত লিখিয়া থাকেন, তবে তাহা কেহ আমল করিবেন না। বরং তাহার সংশোধনের জন্য তাহাকে জানাইয়া সংশোধন করিবেন।

৪৩. এলম দুই প্রকার, এলমে-জাহের ও এলমে বাতেন। এলমে জাহের শরিয়ত-কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও ফেকাহ শরীফ ইত্যাদি। শরিয়ত মোতাবেক আমল করাই তরিকত। তরিকত ব্যতীত মারেফাত হকীকত হইতে পারে না। উহা মিথ্যা বৈ কিছুই নহে। শরিয়ত ছাড়িয়া যারা মা’রেফাত আমল করে, তাহারা ফাছেক শরিয়ত অনুযায়ী তরিকত মা’রেফাত এবং হাকীকত 1 শিক্ষা করা ফরজ। যাহারা তরিকত আমল না করে তাহারা ফাছেক। যাহারা সত্য তরিকত, মা’রেফাত ও হাকীকত অবজ্ঞা করে তাহারা কাফের ।

৪৪. কদমবুছি জায়েজ আছে, পীরের পায়ে হাত দিয়া সে হাতে তাজিমের জন্য চুম্বন করা বিদআতে জায়েজ। মুখ দিয়া কদমবুছি করা সুন্নত। যদি পীর উপরে থাকে, আর কদমবুছি করে, তবে জায়েজ হইবে।

[প্রথমে উল্লেখিত বাংলা ১৩৩৭ সনের ওসিয়তনামায় বলা হয়েছে, ‘শরীয়ত সঙ্গত বোজর্গ লোকদিগের কদমবুছি করা জায়েজ, তবে তাহা যদি মাথা নীচু করিয়া রুকু বা সিজদার হালতে করিতে হয়, তবে তাহা জায়েজ হইবে না।’ জীবনী পুস্তকগুলোতে আছে, মুজাদ্দেদে জামান (রহ.) ব্যক্তিগতভাবে কদমবুছিতে অপছন্দ করতেন। কেউ করে ফেললে বলতেন, “তুমি কী আবুবকরকে জাহান্নামে পাঠাবে?” কদমবুছির বিরুদ্ধে ‘কদমবুছি রদ’ নামে একটি বইও লিখিয়েছিলেন। – সংকলক]

৪৫. আল্লাহ্ ব্যতীত কাহাকেও এবাদতের সেজদা করা কুফর। তাহিয়াতের সেজদা করা হারাম। এই হারামকে যারা মোবাহ জানে, তাহারা কাফের। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসারাম-এর জমানার পূর্বে রুকুর নাম সেজদা ছিল, তজ্জন্য নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন, “যেন কেহ সালাম দিবার কালেও পূর্ব্ব জমানার সেজদার ন্যায় মাথা নত না করে।” যাহা বর্তমান তাহইয়াতের (তাজিমের) সেজদা হালাল জানিয়া করে ও লয়, তাহারা কাফের হইবে।

৪৬, মোরগ লাগিয়া খাওয়া সুন্নত। হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাঁদিয়া রাখিয়া পাইয়াছেন, আমিও আমার মোতাকেদ ও সর্বসাধারণ ভাইদিগকে আদেশ করি। ‘আল্লা’ – মোরগ না দিয়া খাওয়া তাহরিমি।

৪৭. হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী, তাঁহার পরে কোন নবী হইবে না। যদি কেহ কোন সময় পয়গম্বরী দাবী করে, তবে সে মিথ্যাবাদী।

৪৮. বর্তমানে একদল ফকির বাহির হইয়াছে, তাহারা বোগদাদী সেজদা করে, তাহারা উত্তর দিকে সেজদা করে পীর ছাহেব পীর ছাহেব বলে থাকে, উহা হারাম। উহা জায়েজ জানিলে বেদীন হইতে হয় ।

৪৯. পীর খান্দানেই যে কেবল পীর হইবে, এই মত কথা কোন কেতাবে নাই। যিনি শরিয়ত ও মা’রেফাত ইত্যাদিতে কামেল হইবেন, তিনিই পীর হইতে পারিবেন, যে বংশেরই হোক না কেন।

৫০. আমার মুরিদ মো তাকেদগণ, দরুদ ও ওযিফাসমূহ ও মোরাকাবা। ইত্যাদি যথারীতি করিবেন। মিথ্যা কথা বলিবেন না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিবেন না। পর্দা পুশিদা মতে চলিবেন। সুদ ঘুষ খাবেন না ও হারাম মাল খাইবেন না। হারাম কার্য যেমন গান বাজনা করিবেন না ও শুনবেন না। ঐ সকল হইতে পরহেজ না করিলে ‘কলব’ বন্ধ হইয়া যাইবে। মারেফাতের কোন স্বাদ পাইবেন না। শরিয়তের খেলাফ বলিয়া দাবি করিলে খোদার নিকট দায়ী থাকিবেন আমি ঐরূপ মুরিদ ও খলিফা চাহি না, তাহাদের নিকট কেহ মুরিদ হইবেন না ।

৫১. কেহ শেরেক গোনাহ করিবেন না। যেমন হিন্দুর পূজায় ভেট দেয়া, পাঠা, কলা, দুধ ইত্যাদি বিক্রয় করা, দিকশূল ব্রহস্পর্শ, শনি, রবিবার মানিতে নাই। কাহারও মাল হারাইয়া গেলে, গণক বাড়ি গণাইতে যাইবে না। ধান চাউলকে মা লক্ষ্মী বলিবে না। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা মোছলমান ভাই ভগ্নীদিগের ঈমান কায়েম রাখিবেন।

৫২. বাজারের ভেজাল ঘৃত, দধি, মিষ্টান্ন, সাদা চিনি হইতে পরহেজ করিবেন। আমি ঐ সকলের মর্ম যতদূর অবগত হইয়াছি, তাহাতে আমার উচিত হয় যে, সর্বসাধারণের পরহেজগারি অবলম্বন করার জন্য ঐ সকল ব্যবহার করিতে নিষেধ করি। অমোছলমানদের তৈয়ারি মিষ্টান্ন ইত্যাদি না খাওয়া ভাল, কেননা তাহারা যাহা হালাল জানে, তাহা আমাদের জন্য হারাম, যেমন গোবর, চোনা ইত্যাদি।

৫৩. কেহ জামাতা হইতে মেয়ে আটক রাখিবে না। জামাতার সাথে কোন বিষয়ে বিবাদ হইলে মেয়ে আটক করা হারাম। কেহ কন্যা ও ভগ্নী ইত্যাদি আটক করিবেন না। যদি কোন বিবাদ উপস্থিত হয়, তবে তাহা মীমাংসা করিয়া শীঘ্র মেয়ে পাঠাইয়া দিবেন। ৫৪. নিজ স্ত্রীকে কেহ বাপের বাড়ি বা অন্যত্র ফেলে রাখিয়া কষ্ট দিবেন না।
তাহাদেরকে পর্দাতে রাখিয়া তাহাদের হক যথারীতি আদায় করিবে, নচেৎ গোনাহগার হইবে ।

৫৫. কেহ হুক্কা বিড়ি সিগারেট ব্যবহার করিবেন না। উহা মকরুহ তাহরিমি। মদ, গাজা, ভাঙ্গা ও নেশার দ্রব্য সকল হারাম।

৫৬. গোরস্থানের হেফাজত করিবেন, গোরের ওপর দিয়া পথ দিবেন না। গোরস্থানের নিকট পায়খানা প্রস্রাবের স্থান করিবেন না, করিলে গোনাহগার হইবেন ও বদ-দোয়া প্রাপ্ত হইবেন, যথাসাধ্য গোরের হেফাজত করিবেন।

৫৭. বৃদ্ধ পিতা-মাতার খেদমত করিবেন, তাহাদের সন্তুষ্টির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা ও যত্ন করিবেন।