ফুরফুরার গদ্দীনশীন পীর সাহেবের নসবনামা বা বংশ লতিকা

নসবনামা বা বংশ লতিকা প্রণয়ন বড় কঠিন বিষয়। প্রকাশ থাকে যে, বংশ লতিকায় অমুকের পুত্র অমুক সর্বত্র বলা হয়নি। প্রকাশিত বিভিন্ন বংশ-তালিকা সম্বন্ধে ঐক্যমত্যে পৌঁছান খুবই দুরূহ। আল্লামা শিবলী নোমানী তাঁর বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ সীরাতুন্নবী পুস্তকে (১/১৫১-১৫৩ পৃষ্ঠা) কম-বেশি হওয়ার ঐতিহাসিক তথ্য পেশ করেছেন। আল্লামা সুহাইলীর রওযুল উনফ কিতাবের বরাত দিয়ে দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করেছেন আদনান এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর মধ্যে চার কিম্বা সাত পুরুষের দূরত্ব যা বর্ণনা করেছেন, তাঁদের তথ্য ঠিক নয়। কেননা ঐ দুয়ের মধ্যে অনেক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আদনান থেকে হযরত ইসমাঈল (আ.) পর্যন্ত দূরত্ব ছিল চল্লিশ পুরুষের।

এ ভুলের প্রধান কারণ এই যে, আরববাসীরা নসবনামায় শুধু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করত। মাঝখানে অনুল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের নাম সাধারণত বাদ দিয়ে দিত। তদুপরি আরবগণের নিকট যেহেতু আদনানের হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর হওয়ার স্বপক্ষে অকাট্য ও সর্বজন স্বীকৃত তথ্য ছিল, কাজেই তারা কেবল সঠিকরূপে আদনান পর্যন্তই বংশীয় সূত্র পৌঁছানোর চেষ্টা করত এবং তার উপরের ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে অন্যদিগকে পরিত্যাগ করত।

নাম কম-বেশি ও ভিন্ন হওয়ার আরও কারন থাকতে পারে। তার অন্যতম বংশ পরম্পরায় নসবনামা তৈরির সময় উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষদের একাধিক সন্তান-সন্তুতির সন্ধান পাওয়া যায়। ফলে শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে। কাজেই নিজের প্রয়োজনে একাধিক সন্তানের নাম উল্লেখ করেছেন। অনেক সময় একই বংশের দু’দশ পুরুষের মধ্যে একই নামের একাধিক ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। কেহ উপর থেকে মিলানোর চেষ্টা করেছেন, কেহ নিম্ন থেকে, কেহবা একই নামের যে কোন একটি থেকে উল্লেখ করেছেন। ফলে বংশ পরম্পরায় কম-বেশি হয়েছে।

আমাদের প্রকাশিত নসবনামাটি মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী ফুরফুরাভী (রহ.) এবং তাঁর অন্যতম খলিফা সুফি তাজাম্মুল হোসেন সিদ্দিকী (রহ:) প্রমুখ সম্মিলিতভাবে প্রণয়ন করে ছাপিয়ে প্রকাশ করে ছিলেন। আমাদের কাছে এ ছাড়া তেমন কোন গ্রহণযোগ্য প্রামাণ্য দলিল না থাকায় এটিই সাদরে গ্রহণ করেছি। হযরত ইব্রাহীম (আ:) হতে বর্তমান পীর আল্লামা শায়েখ আবুবকর আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী সাহেব হুজুর পর্যন্ত বংশ তালিকা নিম্নে পেশ করছি

(১) হযরত সায়িদেনা ইবরাহীম (আ.)

(২) হযরত ইসমাইল (আ.)

(৩) কিনইয়ার

(৪) হামান

(৫) সাবেত

(৬) সালমান

(৭) হামেদ

(৮) উদাদ

(৯) উদ্দা

(১০) আদনান

(১১) মায়াদ

(১২) নেজার

(১৩) মোফার

(১৪) হযরত ইলইয়াস

(১৫) মাদরেকা

(১৬) খোজায়মাহ

(১৭) কেনানা

(১৮) নাসর

(১৯) মালেক

(২০) ফেহের (অসাধারণ শক্তি-সামর্থ্যরে জন্য তাঁর লকব ছিল কোরায়েশ বিধায় আওলাদদের কোরায়শী বলা হয়)

(২১) গালেব

(২২) লোয়াই

(২৩) কায়াব থেকে দু’টি শাখা হয়েছে একটি

(২৪) মাররা, অপরটি মাদি থেকে কোরত, আবদুল্লাহ, রিয়াহ, আবদুল আজিজ, কফিল, খাত্তাব তনয় হযরত উমর ফারুক (রা.)। মাররা থেকে আবার দু’টি শাখা যথা প্রথম কেলাব, কাজী, আবদ মান্নাফ, হাশেম। আবার হাশেম থেকে একদিকে আব্দুস শামস, আমিয়া, আলআস্, আফফান, হযরত উসমান গণি (রা.) এবং হাশেম থেকে অন্য শাখা আবদুল মোত্তালেব থেকে দু’টি শাখায় আবদুল্লাহ থেকে আকায়ে নামদার হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনতে খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজোহরা (রা.), অন্যটিতে আবু তালেব থেকে হযরত আলী (রা.), হযরত ইমাম হাসান (রা:) ও ইমাম আবদুল্লাহিল হোসায়েন (রা)। মাররা থেকে অপর শাখা

(২৫) তামিম

(২৬) সায়াদ

(২৭) কায়াব

(২৮) আমের

(২৯) উসমান আবু কোহাফা

(৩০) হযরত আবদুল্লাহ আবু বকর সিদ্দিক (রা.)

(৩১) হযরত মুহাম্মদ বিন আবু বকর

(৩২) হযরত কাসেম

(৩৩) হযরত আবদুর রহমান

(৩৪) হযরত আবদুর রহিম

(৩৫) আহমদ মুহাদ্দিস

(৩৬) আমজাদ

(৩৭) আসগার

(৩৮) আবুল এসহাক

(৩৯) শারেহ

(৪০) খাজা জাহেদ

(৪১) খাজা মুহাম্মদ

(৪২) ওয়ায়েস

(৪৩) নসিরুদ্দিন

(৪৪) নূরুদ্দিন আহমদ

(৪৫) বাহাউদ্দিন

(৪৬) সিরাজউদ্দীন

(৪৭) হেদায়েতুল্লাহ

(৪৮) শাহ নূর কুতুবুল আলম

(৪৯) শাহ আজিজুল্লাহ

(৫০) শাহ আব্দুল্লাহ

(৫১) শাহ কুতুব উদ্দীন হাক্কানী

(৫২) খাজা রুস্তম খোরাসানী

(৫৩) জিয়াউদ্দীন জাহেদ

(৫৪) মাওলানা মনসুর বাগদাদী

(৫৫) মাওলানা গিয়াসউদ্দীন

(৫৬) মাওলানা আশরাফ

(৫৭) মাওলানা মুহাম্মদ

(৫৮) শাহ কালু ওরফে কলিমুদ্দি্লা(৫৯) মাওলানা ইসমাইল বাগদাদী

(৬০) মাওলানা দাউদ

(৬১) মাওলানা খেজের

(৬২) হাজি মাওলানা মোস্তফা মাদানী

(৬৩) মাওলানা অজিহুদ্দীন মোজতবা

(৬৪) মাওলানা মোনাক্কা

(৬৫) মাওলানা গোলাম সালমানী

(৬৬) মোহাম্মদ মো’তাসেম বিল্লাহ

(৬৭) হাজি আব্দুল মোক্তাদের

(৬৮) মোজাদ্দেদে জামান আব্দুল্লাহিল মারুফ আবু বকর সিদ্দিকী

(৬৯) শাইখুল ইসলাম আবু নসর মো: আব্দুল হাই সিদ্দিকী

(৭০) মাওলানা আবুল আনসার মোঃ আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী

(৭১) আল্লামা শায়েখ আবুবকর আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী।

(ফুরফুরা শরীফের ইতিবৃত্ত, মুবারক আলী রহমানী, পৃ. ২৭৪-২৮২, প্রকাশক : নাসারীয়া প্রকশনা ট্রাস্ট, কলকাতা, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৯৮৪ ঈসায়ী)